পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সিসা, হুমকির মুখে প্রকৃতিক ও জনজীবন।

আপলোড সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৭:৩৬:০৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৭:৩৬:০৩ অপরাহ্ন


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে অবৈধভাবে সিসা তৈরির ফলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে করে শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে নদী, কৃষিজমি ও পরিবেশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে এলাকার তিন ফসলি জমি।


স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ২নং পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমরাকান্দি (নবীপুর) গ্রামে নদীর ধারে প্রতিদিন রাত ৯/১০টার পর ট্রাকভর্তি পুরোনো ব্যাটারি এনে আগুনে পোড়ানো হয়। এই কাজ চলছে গত ৫-৬ মাস ধরে। তবে এসব ব্যাটারি কোথা থেকে আসে, তা এখনো জানা যায়নি।


পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে খোলা জায়গায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছেন স্থানীয় আমিরুল ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন ওবায়দুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর নামের দুই ব্যক্তি। স্থানীয়রা জানান, তারা এতটাই প্রভাবশালী যে এলাকাবাসী কিংবা সাংবাদিকরাও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।


জানা যায়, রাতের আঁধারে শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই মুখে মাস্ক বা হাতে গ্লাভস না পরেই খোলা জায়গায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছেন। এতে করে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এদিকে ব্যাটারি পুড়িয়ে বের করা সিসা লোহার কড়াইয়ে ঢেলে ৩০ থেকে ৩২ কেজি ওজনের বাটে রূপান্তর করা হয়। পরে সেই সিসার বাট বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হয়।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রদান করে সীসালোভী পক্ষ।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, আমার বাড়ির পাশে এই কারখানার কারণে আমিসহ আমার বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। 


বাঞ্ছারামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমরান হোসেন কামাল বলেন, আমরা আর চুপ থাকবো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গ্রামের মানুষ, ফসলী জমি, স্বাস্থ্য সব হুমকির মুখে। এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।


স্বীকার করে ব্যাটারি কারখানার মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাটারি কারখানা থেকে নষ্ট ব্যাটারী এনে সেগুলো থেকে সিসা বের করে আগুনে গালিয়ে বাটা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। আমরা কারও কোনো ক্ষতি করি না। তবে যেহেতু এলাকাবাসী চায় না, আমরা শীঘ্রই এটি বন্ধ করে দিবো। তার অংশীদার ওবায়দুল্লাহ জানান, আমাদের ট্রেডলাইসেন্স আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।


এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সিসা এমনই এক খারাপ পদার্থ। এইটা যেখানে পড়বে, সেখানে কোনো ধরনের ফসল হবে না, সেটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএসআই ডা. রঞ্জন বর্মন বলেন, ব্যাটারী আগুনে পুড়লে ব্যাটারিতে থাকা সীসা, অ্যাসিড, পারদ, নিকেল ও ক্যাডমিয়াম পুড়ে বিষাক্ত কালো ধোয়া আর অদৃশ্য গ্যাস বাতাসে মিশে পরিবেশকে দূষিত করছে। আর দূষিত বাতাস নিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের ফুসফুসে ঢুকে ক্যান্সার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণসহ শিশুদের বিকলাঙ্গ মতো মারাত্মক অসুখের সৃষ্টি হয়।


এদিকে নদ-নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা তরী বাংলাদেশ এর আহবায়ক শামীম আহমেদ বলেন, এই পদার্থগুলো নদীর পানিতে মিশে পানি দূষিত হয়ে জলজপ্রাণীর মারাত্মক হুমকির সম্মুখে পড়তে পারে। তাছাড়া, পোড়ানোর পর যে অ্যাসিড আর রাসায়নিক গলে বের হয়, সেগুলো নদীতে মিশে পানি একেবারে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মাছ মরে যায়, গরু-ছাগল সেই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়। গ্রামের মানুষ যদি সেই পানি খায় বা ব্যবহার করে, ধীরে ধীরে কিডনি বিকল, লিভার নষ্ট, রক্তে বিষ জমে যাওয়া, শিশু জন্মগত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।


এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, অবৈধ সিসা কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযাযী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরুপ ও জমির ফসলের জন্য ক্ষতিকর সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা মোবাইল কোর্ট চালাবো।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রাকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমরা জানতাম না। ডিসি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নিবো। কারখানাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেয়নি।

 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]