ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে ৪ বছরে ঘুষ দুর্নীতি করে শত কোটি টাকার মালিক যুবলীগ ক্যাডার বিআরটিএর পরিদর্শক রঞ্জিত হালদার

আপলোড সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৭:১১:১৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৭:৪৫:৫৮ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক 
বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধার জাল সার্টিফিকেট ছিল কাগজের মত অর্থ দিলেই মিলে যেত আর যদি সে হত গোপালগঞ্জের বাসিন্দা তাহলে তার জন্য থাকতো না কোন শর্তই, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ আর গোপালগঞ্জের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ নিয়মে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী শূন্য থেকে হয়ে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএর মেট্রো সার্কেল ১ মিরপুর ১৩ বিতর্কিত মোটরযান পরিদর্শক রঞ্জিত হালদারের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি অসদাচরণ সহ রয়েছে নানা অভিযোগ কিন্তু এগুলো তিনি কখনো আমলে নেন না। 



২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর রয়ে গেছে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে গোপালগঞ্জের শেখ সেলিমের ক্যাডার যুবলীগ নেতা রঞ্জিত হালদার এখনো আছে বহাল তবিয়তে মিরপুর ১৩ বিআরটিএতে মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে ক্ষমতার দাপট এক চুলও কমে নি তার অনিয়ম ঘুষ দুর্নীতি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।



রঞ্জিত হালদার গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলার কচাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা যোগেন্দ্র নাথ হালদারের ছোট ছেলে। অধিকাংশ এলাকাবাসীর অভিযোগ রঞ্জিত হালদারের পিতা যোগেন্দ্রনাথ হালদার কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না অর্থ ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়েছেন। 



কোটালীপাড়ায় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন রঞ্জিত হালদার ছিল ভবঘুরে বদমেজাজি পিতা ছিল দরিদ্র কৃষক ছিল ভাঙ্গা ঘর ও সামান্য কিছু জমি জমা, স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল কোটালীপাড়া উপজেলা যুবলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিল, শেখ সেলিমের সশস্ত্র ক্যাডার হিসেবে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। রঞ্জিত হালদার তার থেকে ১০ বছর বয়সে বড় ঝর্না রানী বিশ্বাস নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেন যার আগের ঘরের একটি ১০/১২ বছর বয়সের মেয়ে সন্তান রয়েছে,(তবে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ঝর্ণা রানী রঞ্জিত হালদারের থেকে বয়সে ৫ বছরের বড়) এখানেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় এই বিবাহের জন্য পুরস্কার হিসেবে রঞ্জিত হালদারের শ্বশুর শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা নব কুমার বিশ্বাস গোপালগঞ্জের প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রঞ্জিত হালদার কে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেন এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অবৈধ অর্থে ঘুরে গেছে ভাগ্যের চাকা। 


বিআরটিএর অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানীর অভিযোগ অধিকাংশ কাজ ঘুষ ছাড়া হয় না সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা, রঞ্জিত হালদার বিআরটিএর পরিদর্শক হওয়ার পরই নেমে পড়েন ঘুষ বাণিজ্যে গোপালগঞ্জের প্রভাবে  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করতেন না নিজেকে পরিচয় দিতেন শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তার বিরুদ্ধে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতো না।


চার বছর চাকরিতে ঘুষের টাকায় বদলে গেছে তার ভাগ্য, ভাঙ্গা টিনের ঘর ভেঙে নির্মাণ করেছেন পাকা বিল্ডিং ঘরে লাগিয়েছেন ডাবল এসি নামে বেনামে করেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অভিযোগ আছে আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য বড় ভাই মনোজিত, মেজ ভাই সঞ্জিত, বোন, পিতা যোগেন্দ্র নাথ হালদার, মা আরতি হালদার, স্ত্রী ঝর্ণা রানী বিশ্বাস,শশুর নব কুমার বিশ্বাস, শাশুড়ি শেফালী বিশ্বাস সহ আরো অনেক আত্মীয়স্বজনের নামে বেনামে ক্রয় করেছেন বিপুল সম্পত্তি শুধু গোপালগঞ্জে রয়েছে কয়েকশো বিঘা জমি রাজধানী ঢাকায় উত্তরা কাফরুল ও খিলগাঁয়ে ক্রয় করেছেন একাধিক প্লট ফ্লাট, চলাচলের জন্য রয়েছে একটি গাড়ি তবে সেই গাড়িটি অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এছাড়া তার বড় ভাই মনজিৎ কোটালীপাড়া সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকের অভিযোগ এখানে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছেন।


সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রঞ্জিত হালদার ও তার স্ত্রী ঝর্ণা রানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দপ্তরে তার সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।


রঞ্জিত হালদারের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর ১৩ নম্বর বিআরটিএর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি গোপালগঞ্জের লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভয় কেউ মুখ খুলতো না যে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রকাশ্য গালিগালাজ করতেন দলীয় প্রভাব দেখাতেন কিন্তু ৫ই আগস্টের পরে তিনি এখনো সেই একই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন অবাক করা বিষয় কিভাবে সম্ভব? তারা আরো বলেন রঞ্জিত হালদার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রকাশ্য হুমকি দিতেন মামলার ভয় দেখাতেন আন্দোলনকে সমর্থন না করার জন্য, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির বাড়ি গোপালগঞ্জের হাওয়ায় তার নির্দেশে মিরপুর ১০ নম্বরে ছাত্র জনতার বিপক্ষে আন্দোলন দমাতে স্বশরীরে তিনি অংশগ্রহণ করেন কিন্তু ৫ ই আগস্টের পরে ভোল পাল্টিয়ে ফেলেন তবে এখনো তার বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড় ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে ৩৪ জন সাংবাদিককে প্রতিমাসে মাসিক চাঁদা দেন এজন্য গণমাধ্যমে তার ঘুষ ও অপকর্ম নিয়ে কোন প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে না আবার  একটা সংবাদ প্রকাশ হলেও অবৈধ অর্থ দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে নিচ্ছেন। 


ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে প্রতিটি দপ্তরে চিঠি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কোঠায় কতজন চাকরি করছে সেই তালিকা চেয়েছে এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চলছে আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হবে, ভুয়া মুক্তিযুদ্ধ সনদে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল এবং সনদে নিয়োগকৃত চাকরি ও বাতিল এবং আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে। 



এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোটরযান পরিদর্শক রঞ্জিত হালদার এগুলো মিথ্যা বলেই ফোন কেটে দেন।
 
মোটরযান পরিদর্শক রঞ্জিত হালদারের বিভিন্ন অনিয়ম ঘুষ দুর্নীতি ও প্রতিমাসে ঘুষের টাকা যে সকল সাংবাদিককে চাঁদা দেন সেই তালিকা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন আসছে দ্বিতীয় পর্বে।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]