পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না; জবাবদিহিতামূলক সরকার কায়েম হবে -ফেনীতে পীর সাহেব চরমোনাই

আপলোড সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০১:৪০:০৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০১:৪০:০৪ অপরাহ্ন
 
জাহিদ হাসান চৌধুরী; ফেনী জেলা প্রতিনিধি:
 
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না; জবাবদিহিমূলক সরকার কায়েম হবে। একটি সুন্দর দেশ গঠন হবে। জবাবদিহিতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হ্রাস পাবে এবং সংলাপের সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রতিটি ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে । সকল দল-মতের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তৈরি হবে।

 
আজ ২০ শে আগস্ট'২৫, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায়  ঐতিহাসিক ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে  চত্বরে  প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ফেনীতে টেকসই বাধ নির্মানের দাবিতে ও  ইসলাম দেশ ও মানবতাবিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে   ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী  জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি।
 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ফেনী জেলা সভাপতি  মাওলানা গাজী এনামুল হক ভুইঁয়া  এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আলহাজ্ব মাওলানা একরামুল হক ভুইঁয়া  এর সঞ্চালনায় আয়োজিত গণসমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে একই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোন অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোন সুযোগ করে দেয়া যাবে না।

 
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ৫ আগষ্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে, আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনী সংস্কারের কাজ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন আসে নাই। ৫ আগষ্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজী কোন অর্থেই কমে নাই। সন্ত্রাসও কমে নাই। বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছে স্বাভাবিক কারণেই।
 

জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ এই ধরণের রাজনীতি দেখতে চায় না। এই ধরণের অপরাধের সাথে জড়িতদের একটা বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএনপি কর্তৃক তাদের বহিস্কারের মাধ্যমে এটা প্রমানিতও বটে। তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলবো, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা দেখিয়েই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবী করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপির প্রতি হবে এটা স্বাভাবিক। জনতার এই প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
 

তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ফেনীর জনগণ শুধু রাজনীতির সংকটে নয়, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রোধে দিনরাত কষ্ট পাচ্ছে। নদী ভাঙন, বন্যা ও পরিবেশগত অস্থিরতা তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। টেকসই উন্নয়নের নামে বাঁধ নির্মাণে ব্যর্থতা, পানি নিষ্কাশনে অবহেলা-এগুলি শুধু ফেনীর সমস্যা নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি ফেনীতে টেকসই ও বিজ্ঞান ভিত্তিক বাঁধ নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি ।
 
 
গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ,ফেনী ১আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, ফেনী ২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব মাওলানা একরামুল হক ভুইঁয়া, ফেনী ৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব সাইফ উদ্দিন শিপন, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মুফতি আবদুল হান্নান, হেফাজতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, জেলা যুব আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জাহিদ হাসান চৌধুরী, জেলা ছাত্র আন্দোলনেরসভাপতি আলী আহমদ ফোরকানসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
 

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা গাজী এনামুল হক ভুইঁয়া  বলেন, চাঁদাবাজী ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব করেছিল। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির আমূল সংস্কার হবে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। প্রতিহিংসা দূর হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু ক্ষমতা লোভী কিছু মানুষ ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করায় সুস্থ রাজনীতির প্রত্যাশা আজ ফিকে হয়ে গেছে। সোহাগ হত্যা তার একটি দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে আমরা কোনভাবেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি না। 
 

তিনি বলেন, জুলাই’২৪ এর বিপ্লব ছিল নতুন বাংলাদেশ আবিস্কার। বিপ্লবীদের শ্লোগান ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিজ। ইমাম-খতীবদের জুমার খুতবা ছিল ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক বাক্সে ভোটের মাধ্যমে সেই কাঙ্খিত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]