
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালঃ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সদ্য বরিশালের উজিরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি এস শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার হাতে দল চালাতে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। মান্নান ভুঁইয়া তখন দলের মহাসচিব। মোসাদ্দেক আলী ফালু ভাই জানেন’।
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলালের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তাকে নমিনেশন এনে দিয়ে ভোটে জেতাতে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। অইয়াই আমারে বাঁশ দেয়া শুরু করছে। সাইফুর রহমানের পোলা নাসের রহমান টইন্নারে (টনি) নিয়া আলাইল্লা (আলাল) আমারে মামলায় দেছে’। বিএনপি আমলের মামলায় এহনো ভূগি।
আরেক উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সেই দিন ভুইল্লা যান। আমারে আঙ্গুল দিয়েন না। আমি কিন্তু বরিশালে একবার ভোট করেছি, আবারও করে দেখাবো।’
বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন যথাক্রমে গত রোববার ও সোমবার শেষ হয়েছে। ওই সম্মেলনে এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু এসব কথা বলেন। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সান্টু আগামী নির্বাচনে বরিশাল ২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে মনোনয়ন নিরাপদ করতে ‘নিয়ন্ত্রিত’ সম্মেলন করেছেন, বলে অভিযোগ রয়েছে। আর নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই তিনি সম্মেলনে এই বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় নেতাদের।
উজিরপুরের গুঠিয়ায় সান্টুর বাড়ির অদূরে তার মালিকানাধীন বায়তুল ভিউ কনভেনশন সেন্টারে উজিরপুর-বানারীপাড়া এই দুটি উপজেলার সম্মেলনে অনুগতদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। পদপ্রত্যাশী অন্যরা সম্মেলনে না যাওয়ায় বিনা কাউন্সিলেই কমিটি হয়। তবে এসব আলোচনা ছাপিয়ে গেছে দুটি সম্মেলনে সান্টুর বক্তব্য। তিনি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রভাবশালী নেতাদের জড়িয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়ায় বরিশালে ব্যাপক সমালোচিত।
এসব বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলাল, সরোয়ার বলেছেন, 'সান্টুর এসব বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় এসব বলেছেন। আগে কিংস পার্টি রাজনীতি করাসহ বারবার দল বদলানোর সান্টুর অতীত চরিত্রের কথাও বলেছেন এ নেতারা।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘খালেদা জিয়া দল চালাবার জন্য কারো বৈধ টাকাও নেন না। সান্টু রাজনীতিবিদ নন, ব্যবসায়ী। আন্দোলনের সময়ে বিদেশ থাকেন। টাকা দিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করতে চান’। তাকে হুশিয়ারি দেয়া প্রসঙ্গে সরোয়ার বলেন, 'রাজনীতি করে আসলে এভাবে কথা বলতেন না’।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে নিয়ে যা বলেছে বলুক।'
দেশনেত্রী বেগম খালেদার জিয়ার এত বছরের যে ইমেজ কেউ কখনো এই ধরনের অভিযোগ দিয়ে ক্ষুণ্ণ করতে পারেনি। সান্টুরাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, এবিষয়ে আমি তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে তিনি (সান্টু) বলেছেন আমি ডোনেশনের কথা বলেছি।
এবিষয়ে বরিশাল জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, 'আমি প্রোগ্রামে ছিলাম কিন্তু বিষয়টি খেয়াল করি নাই। পরে আবার তিনি বলেন, সান্টু যা বলেছে তা স্বাভাবিক কথা বলছে। সে বলতে চাইছে সে বিনা স্বার্থে দল করছে।'
বরিশাল জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, 'এস শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু আবেগে কথাগুলো বলেছেন। তবে এই কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি।
তবে এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর ফোনে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এবিষয়ে মোবাইলে কিছু বলবাে না।'