তানোরে পোস্ট অফিসে জমানো টাকা আত্মসাৎ গ্রাহকদের মানববন্ধন

আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১০:২৩:১৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১০:২৩:১৪ অপরাহ্ন



দেলোয়ার হোসেন সোহেল তানোর থেকে- রাজশাহীর তানোরে ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ৫৫ জন গ্রহকদের সঞ্চয় পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পোস্ট মাষ্টার কর্তৃক আত্মসাৎ হওয়ার প্রমান মিললেও দীর্ঘদিনেও টাকা ফেরৎ পাননি ভুক্তভোগী ওই গ্রহকরা। এঘটনায় গ্রহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।


মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর১২ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা ব্যাপি তানোর অফিসের সামনে টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবিতে মানব বন্ধন করেছেন গ্রাহকরা।


এসময় গ্রাহকরা বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের জমানো টাকা ফেরৎ না দিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও জানান ভুক্তভোগী ওই গ্রাহকরা।


গ্রাহকরা বলছেন, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা পোস্ট অফিসের সরকারী লেজারে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরেও সে টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।


সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে  জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী প্রায় ৩ বছর ধরে ৫৫ জন গ্রাহকের সঞ্চয় পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেজার বইয়ে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। তবে, গ্রহকদের পাশ বইয়ে জমা দেখানো হয়েছে।


গত ২৪ সালের মার্চ মাসে বিষয়টি জানা জানি হয়ে পড়লে পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন গ্রাহকরা। এঘটনায় ওই সময় ডাক বিভাগের উর্ধবতন কর্মকর্তাদের তদন্তে গ্রাহকের টাকা আত্নসাতের বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার পর পোস্ট মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্থ করে পুলিশে সোপর্দ করে তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন ডাক বিভাগ কর্তৃপক্ষ।


পরে রাজশাহী দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার আদালত থেকে জামিনে মুক্ত পেলেও আর অফিসে আসছেন না। বর্তমান পোস্ট মাস্টার গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না।


এবিষয়ে তানোর সদর গ্রামের মৃত জামালের স্ত্রী সিরিনা বলেন, ৮ লাখ টাকা তানোর পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জমা রাখা ছিল। মেয়াদ শেষ হলেও সেই টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে তিনি জমানো টাকা ফেরৎ পেতে প্রশাসন ও পোস্ট অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।


একই কথা বলেন, তানোর সদর গ্রামে মৃত খোদাবক্স মেম্বারের পুত্র কুয়েত প্রবাসী মাসুদ রানা তিনি বলেন, আমার জমানো কষ্টের ২৬ লাখ টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা। তানোর গোল্লা পাড়া গ্রামের অশেষ মালাকারের স্ত্রী গৌরী সরকার বলেন আমার ৩ লাখ টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা।


তানোর সদর হিন্দু পাড়া গ্রামের মৃত সুরেন্দ্র নাথ পালের পুত্র হিরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, আমি ১০ বছর মেয়াদে ১০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম মেয়াদ শেষে আমার ১৩ লাখ টাকা পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী আত্নসাৎ করেছেন। কয়েল গ্রামের সৈয়দ আলীর পুত্র মাসুদ রানা বলেন, আমার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা।


তানোর উপজেলার শ্রী খন্ডা গ্রামের মহন লাল পালের পুত্র রাজ কুমার বলেন, আমার ১লাখ ৮০ হাজার টাকা। তালন্দ গ্রামের মৃত শামসুদ্দীন মন্ডলের পুত্র মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হরিদেবপুর গ্রামের সাধন সরকারের স্ত্রী মিনতি সরকার বলেন, আমার ৮  লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে রেখেছিলাম মেয়াদ শেষে হয়েছে কিন্তু টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা।


ভুক্তভোগীরা বলেন, ওই সময় পোস্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দেয়ার আশ্বাষ দেয়ার ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরৎ পাচ্ছিনা। আগামী ১সপ্তাহের মধ্যে আমাদের জমানো টাকা ফেরৎ না দেয়া হলে কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারী দেন তারা।

 

এবিষয়ে তানোর পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল মালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বরখাস্ত হওয়ার আগের পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী আত্নগোপনে রয়েছে জানিয়ে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট মাস্টার ডেপুটি জেনারেল রাকিব বিশ্বাষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।


এবিষয়ে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (তদন্ত)-দায়িত্ব রাকিব বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্তকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি মামলাও করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। এখন পুরোপুরি বিষয়টা আইনিও প্রক্রিয়ায় চলছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়টা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে।

 

 

 


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]