সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে শতাধিক গ্রাহকের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করার দায়ে দেশি ও বিদেশী নাইজেরিয়ান ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:০৮:১৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:০৮:১৯ অপরাহ্ন
 
 
নিজস্ব প্রতিবেদক : সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে শতাধিক গ্রাহকের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করার দায়ে দেশি ও বিদেশী (নাইজেরিয়ান) ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।


র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তথ্য ও প্রযুক্তিকে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র অপব্যাবহার করে বিভিন্ন রকমের প্রলোভল দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে। র‍্যাব সবসময় এ ধরণের সাইবার ক্রাইমে জড়িতদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 
 

সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিদেশী নম্বর ব্যাবহার করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র থেকে মধ্যম মানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি চক্র বিভিন্ন দফায় অর্থ আত্মসাৎ করছে। একই সাথে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি সুকৌশলে প্রতারণার ফাদ তৈরি করে। বিশ্বাস অর্জন করলেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এধরণের প্রতারণা বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং চক্রটি তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে যথেষ্ট দক্ষ। প্রতারণার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি WhatsApp অথবা Teligram ব্যবহার করে অথবা Fake Online E-commerce website তৈরী করে তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর সংযুক্ত করে। 
 

ঠিক এরকমই একটি চক্রকে র‍্যাব-১ এর একটি চৌকষ দল অনুসন্ধান করে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সনাক্ত করে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিদেশী সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে চক্রটিতে কিছু নাইজেরিয়ান নাগরিক জড়িত যারা বাংলাদেশী মেয়েদের মিডিয়া হিসেবে ব্যাবহার করে আড়ালে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বরে সরাসরি ক্যাশ ইন /ক্যাশ আউট করে প্রতারণার সুনিপুণ ফাঁদ তৈরি করে এবং মিডিয়ায় নিয়োজিত মহিলাদের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করার সাথে সাথেই হাতিয়ে নেয় লক্ষাধিক টাকা। 
 

বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রে তারা মূলত একজন বিত্তবান বিদেশী নাগরিকের বেশ ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো অথবা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশ থেকে পাঠানো দামী পণ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নির্ধারিত চার্জ দাবি করে প্রতারণা করে। এক্ষেত্রে তারা ফটোশপ করা বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট বানিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে প্রথম ধাপে সামান্য অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স অথবা বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য বড় অংকের টাকা দাবি করা হয় যা অধিকাংশ গ্রাহক প্রলুব্ধ হয়ে প্রদান করে।
 

বর্ণিত প্রতারণার ধরণ সনাক্ত করে গত ৬ জুলাই রাত এবং ৭ জুলাই দিনের বেলার বসুন্ধরা ও মীরপুরের পল্লবী এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ২ জন নাইজেরিয়ান নাগরিক Frank Coco (৩৬), Emanuwel (৩৫) এবং একজন বাংলাদেশী নারী সদস্য মোসাঃ সুইটি আক্তার (২৭)’দের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সাথে জড়িত মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
 

গ্রেফতারকৃত নাইজেরিয়ান Frank Coco @ কোকো, Eman Well এবং প্রায় ২ বছর যাবত এই প্রতারণার সাথে জড়িত। তাদের সহযোগী সুইটি আক্তার ৩ মাস যাবত তদের সাথে যুক্ত হয়েছে। Frank Coco @ কোকো ২ বছর আগে র‍্যাব-১০ কতৃর্ক গ্রেফতার হয়। চলমান অভিযানে তাদের নিকট হতে ২ টি নগদ ও বিকাশ একাউন্ট এ প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার স্টেটমেন্ট পাওয়া যায় যেখানে এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে পুর্বে পাঠানো মেসেজের বরাতে টাকা জমা হচ্ছে। তারা এর পাশাপাশি আরো মোবাইল ব্যাংকিং সিম এবং একাউন্ট ব্যাবহার করে যা উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান। গ্রেফতারকৃত নারী সদস্য মূলত বাংলাদেশের লোকাল কোর্ডিনেটর/মিডিয়া এর বেশ ধরে চক্র থেকে প্রদত্ত বিভিন্ন বাংলাদেশীদের নম্বরে যোগাযোগ করে এবং তাদের প্রলুব্ধ করে অর্থ আত্মসাৎ করে। এক্ষেত্রে তার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বাঙালিরাও এর সাথে সম্পৃক্ত। মিডিয়া হিসেবে অংশগ্রহণকারিরা প্রতারণায় প্রাপ্ত ১০%—১৫% টাকার শেয়ার পায়।
 

বর্ণিত বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই শেষ হয়েছে বলে তারা জানায়, এবং ১ জনের পাসপোর্ট আগেই জব্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
 

ধৃত আসামীদের নিকট হতে প্রতারণার কাজে ব্যাবহৃত ০২টি ল্যাপটপ, ০৪টি আইফোন, ০৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ০৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ০১টি ট্যাব, ০১টি ওরিকো ব্র্যান্ডের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়।

 
প্রতারণা থেকে সতর্কতা-
* সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল অথবা কোন বিদেশী নম্বর থেকে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় টাকা বিনিয়োগ না করা। 
* E- Commerce website থেকে অর্ডার করার আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নেওয়া এবং ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য নেওয়া।
* একই চক্র চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। সরকারি বা বেসরকারি যে কোন সংস্থায় চাকুরির জন্য টাকা নেওয়া এবং দেওয়া দুইটি সমান অপরাধ।
* বিদেশী নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ না থাকলে বাড়ি ভাড়া বা সাবলেট না দেওয়া উত্তম। একইসাথে পুলিশের নিকট হাউজিনহ কর্তৃপক্ষ হতে ক্লিয়ারেন্স প্রদান করাও একান্ত প্রয়োজন।
*মোবাইল ব্যাংকি এ্যাকাউন্ট, নগদ, বিকাশ সহ অন্যান্য অনলাইন এ্যাকাউন্ট এর পিন কোড ও তথ্য অন্য কাউকে শেয়ার না করা। উদ্ধারকৃত সরঞ্জামাদি ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]