রামবুটান চাষে ভাগ্য বদল প্রবাস ফেরত আফজাল শেখের সাফল্যের গল্প

আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০৯:৪৫:০৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০৯:৪৫:০৮ অপরাহ্ন


তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ)। গাজীপুর মো. আফজাল শেখ। বয়স ৩৬। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের এক সময়ের মালয়েশিয়া প্রবাসী এই যুবক আজ এলাকায় পরিচিত নাম। কিন্তু এই পরিচিতি গড়ে ওঠার পেছনে লুকিয়ে আছে সংগ্রাম, স্বপ্ন আর সাহসের গল্প।     


২০১৮ সালের কথা। মালয়েশিয়ায় রং মিস্ত্রির কাজ করতেন আফজাল। জীবন-জীবিকার তাগিদে বিদেশ পাড়ি জমালেও সেখানে তেমন ভালো করতে পারছিলেন না। একসময় সিদ্ধান্ত নেন, ফিরে আসবেন দেশের মাটিতে। কিন্তু দেশে ফিরে কী করবেন? কীভাবে চলবে পরিবার? এই প্রশ্নগুলো অস্থির করে তুলেছে তাকে।     


প্রবাসে থাকা অবস্থায় ইউটিউবে ভিডিও দেখে রামবুটান নামের একটি বিদেশি ফলের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তার। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় জনপ্রিয় এই ফলের চাষের পদ্ধতি নিয়ে জানতে শুরু করেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসেন মাত্র চারটি রামবুটানের চারা।     


নিজ বাড়ির উঠানে চারটি গাছ রোপণ করেন তিনি। যদিও একটি গাছ বাঁচাতে পারেননি, তবে বাকিগুলো টিকে যায়। এদিকে, জীবিকা নির্বাহের জন্য আবারও রং মিস্ত্রির কাজে যুক্ত হন। পাশাপাশি গাছগুলোকে যত্ন করতেন। প্রথম কয়েক বছরে ফলন আশানুরূপ না হলেও হাল ছাড়েননি। যোগাযোগ করেন স্থানীয় কৃষি অফিস ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে শুরু করেন পরিচর্যা।     


এর ফলও পেতে শুরু করেন আফজাল শেখ। এ বছর তার বাড়ির তিনটি রামবুটান গাছে এসেছে বাম্পার ফলন। প্রতিদিনই পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা ভিড় করছেন তার বাড়িতে। প্রতি কেজি ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি সুস্বাদু এই ফল।     


শুধু ফল বিক্রি করেই নয়, গাছের চারা বিক্রিতেও আয় করছেন তিনি। স্থানীয় অনেক আগ্রহী কৃষক তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে শুরু করছেন রামবুটান চাষ। এখন আফজাল শেখ শুধু এক সময়ের প্রবাসী বা রং মিস্ত্রী নন তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও রামবুটানের লোমশ খোসা আর ভিন্ন
স্বাদ এটি আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলের চাহিদা বাড়ছে দেশজুড়ে। বাংলাদেশে এমন নতুন ফলের চাষ সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।     


স্থানীয়রা বলেন, স্বপ্ন, সাহস আর সাধনার এক অনন্য উদাহরণ আফজাল শেখ। নিজের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজে। তার এই পথচলা শুধু এক ব্যক্তির নয়, এটি হতে পারে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণের প্রেরণার গল্প।     


আফজাল শেখ বলেন, পরিকল্পনা, ধৈর্য, নিয়মিত পরিচর্যা আর পরিশ্রম এই চারটি বিষয়কে ভিত্তি করেই আমি আজ এই অবস্থানে। প্রথমে শুধুই শখ ছিল। ভাবিনি একদিন এটাই হবে আমার আয়ের বড় উৎস।   


তিনি জানান, রামবুটানের পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়ান ডুরিয়ান, আফ্রিকান ননিফলসহ বেশ কয়েক ধরনের বিদেশি ফলের গাছও লাগিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষের ইচ্ছা তার। আফজাল শেখ শুধু নিজের ভাগ্য বদলাননি। আশেপাশে অনেক তরুণকে কৃষি উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ করছেন। চারা সরবরাহের পাশাপাশি তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।     


তিনি বলেন, আমি চাই দেশের আরও জায়গায় রামবুটান চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। এটা শুধু লাভজনক নয়, বরং কৃষির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সহায়ক হবে। তরুণরা যদি এই খাতে আসে, তাহলে বেকারত্ব অনেকটাই কমবে।     


কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু রামবুটান চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যারা আগ্রহী, তাদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।    


তিনি আরও বলেন, আফজাল শেখের মতো প্রবাস ফেরত তরুণরা যদি এই ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসে, তাহলে কৃষিতে নতুন বিপ্লব ঘটবে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]