বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিকার দাপটে অসহায় অন্য শিক্ষকরা, রয়েছে হাতাহাতিরও অভিযোগ

আপলোড সময় : ০৩-০৭-২০২৫ ০৮:২৩:৫৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৩-০৭-২০২৫ ০৮:২৩:৫৩ অপরাহ্ন


ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ ত্রিশালে স্কুল চলাকালীন সময়ে এক দাপুটে সহকারী শিক্ষিকার হাতাহাতি, অকথ্য ভাষায় গালীগালাজ, চুলাচুলি ও তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে একাধিক শিক্ষক  বিদ্যালয় থেকে সেচ্ছায় বদলী হয়েছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির আত্বীয় পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবত এমন কর্মকান্ড করে আসলেও ভয়ে কোন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে কথা বলা বা অভিযোগও দেননি।


দেশের অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসলেও পরিবর্তন হয়নি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার ও কামরুন নাহার। এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবী করেছেন অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। তাদের এমন কর্মকান্ডের শাস্তিমূলক বিচারের দাবী জানিয়ে বুধবার জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।



ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুরূপা রানী সাহা উপর বারবার স্কুল চলাকালীন সময়ে হাতাহাতি ও অকথ্য গালীগালাজ করার অভিযোগ ওঠেছে একই স্কুলের  সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তারের বিরুদ্ধে। এঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষকা আখিঁ আক্তারের বিচারের দাবী করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।


২৬ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তৃতীয় বারের মতো স্কুল চলাকালীন সময় এই ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার বিষয়ে সহকারী শিক্ষক সুরূপা রানী সাহা জানান, স্কুলে সকল প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের সামনে অফিস কক্ষে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালীগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে আমার ওপর হাত তোলার চেষ্টা করে।



এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার এর আগেও এই বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক সাজিদা ইয়াসমিনকে মারার জন্য ক্ষিপ্ত হন। তখন সহকারী শিক্ষক সুরূপা রানী সাহাকে ছাতাদিয়ে মারধর করেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদলের সান্নিধ্যে থাকায়  বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষিকা আখিঁ আক্তারের কাছে জিম্মি ছিল সকল শিক্ষক। তার কথা মতো না চললেই তিনি হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, আঁখি আক্তার ও কামরুন নাহারের জন্য এ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক থাকতে চাননা। উনার কারণেই পূর্বে কয়েকজন শিক্ষক এ বিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় বদলী হয়ে অন্য জাগায় চলে গেছেন। আমরা অনেক কিছু জানি কিন্তু বলতে পাচ্ছি না সরি।

 

ঘটনার সত্যতা জানতে কথা হয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আখিঁ ম্যাডাম স্কুলে সময় মতো আসে না আর ক্লাসে বসে সারাক্ষণ মোবাইল চাপেন। সেদিন আঁখি ম্যাডাম খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি করছেন সুরূপা ম্যাডামকে। আমাদের অনেক সহপাঠীরা এ স্কুল থাইকা চলে গেছে শুধু আঁখি ম্যাডামের ভয়ে।


পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিমা পিতা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বেশ কয়েক জন জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আঁখি আক্তার ও কামরুল নাহার ম্যাডামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছি। সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার ও কামরুল নাহার স্থানীয় সাবেক বাদল চেয়ারম্যানের খুব কাছের মানুষ হওয়ায় তারা স্কুলে প্রায় সময় অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকাদের উপর হুটহাট উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান ক্ষুর্ণ হচ্ছে। আমরা চাই এই দুজন শিক্ষিকাকে দ্রুত অন্য কোথায় বদলি করে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা। তা না হলে দিনদিন এ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়বে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার বলেন, আপনারা শুধু আমার চিল্লাচিল্লি কথা শুনেছেন। আমি আর কি বলবো আমার বলার কিছু নেই।


এবিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দীপা রানী দত্ত বলেন, সেদিন আঁখি আক্তার একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে ছিলেন। পরে আমি ধমক দিলে তিনি কিছুটা শান্ত হন। তবে আমার সামনে এ রকম করা ঠিক হয়নি।


এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফা হাকিম জানান, স্কুল পরিদর্শন করে, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উবাইদুল্লাহ জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি, তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।    


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, শিক্ষিকাদের এ ধরনের দ্বন্ধ অপ্রত্যাশিত। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এর প্রভাব পড়বে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।





 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]