
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চাঞ্চল্যকর গৃহবধু হত্যা মামলাসহ ১৪টি মামলার দুর্ধর্ষ আসামি মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু (৫০) র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ গত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ হতে অদ্যবধি দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিনড়ব অভিযানে চাঞ্চল্যকর অপরাধী ৯৭ জন, আরসা সদস্য-১৫ জন, হত্যা মামলায় ১১৬ জন গ্রেফতার, ধর্ষণ মামলায় ৫২ জন গ্রেফতার, অস্ত্র সংμান্ত মামলায় ১৬ জন গ্রেফতারসহ ৮৫ টি অস্ত্র, ১২৮৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ২৯৫ জন এর অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে র্যাব-১১।পাশাপাশি ৪৪ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ৩৮ জন ভিকটিম উদ্ধার এবং ছিনতাইকারী ও ডাকাত ৫৫ জন, জেল পলাতক ৩৬ জনসহ অন্যান্য অপরাধী প্রায় ২৮৭ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব-১১ জনগণের সুনাম অজর্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ০২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম দেওভোগ নুর মসজিদ রোড এলাকায় একটি হত্যার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর পিতা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-৯, তারিখ ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ইং ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে দ্রæত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। ৩।
ঘটনা সূত্র ও এজাহার পর্যালোচনায় জানা যায় যে, ইং ১৪/০৮/২০২০ তারিখ ভিকটিম লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) এর সাথে আসামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না এর নিকট ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ভিকটিমের স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। ভিকটিম ১নং আসামী তার স্বামীকে বাধা নিষেধ করায় তাকে বিভিন্ন সময় মারধর করত।
তারপরও ভিকটিম সংসার করে আসছিল। সংসার করাবস্থায় দাম্পত্য জীবনে ভিকটিমের গর্ভে একটি পূত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। নাম মোরসালিন বয়স ০২ বৎসর। সন্তান হওয়ার পর ১নং আসামী পরকীয়া চালিয়ে আসছিল। ভিকটিম অন্যান্য আসামীদের নিকট পরকীয়ার বিষয়টি জানিয়ে বিচার চাইলে তারা বিচার না করে বরং ভিকটিমকে গালিগালাজ করত। বিষয়টি ভিকটিম তার পরিবারকে জানানোর পর পারিবারিক ভাবে বেশ কয়েকবার শালিস মিমাংশা হয়। তারপরও ১নং আসামী সংশোধন না হয়ে বরং ভিকটিমকে সময় না দিয়ে অধিক রাত্রে বাসায় ফিরত। এই নিয়ে তাদের মধ্যে মন মালিন্য চলে আসছিল। ভিকটিম তার সন্তানের ভবিষ্যত এর দিক বিবেচনা করে মারধরের বিষয়টি গোপন রাখত। অনুমান ০১ সপ্তাহ পূর্বে ভিকটিম তার স্বামীকে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার কারনে অন্যান্য আসামিদের ইন্ধনে ১নং আসামী ভিকটিমকে মারধর করে।
আসামিরা ভিকটিমকে হুমকি দিত যে, মারধরের ঘটনা ভিকটিমের পরিবারকে জানালে জীবনের তরে শেষ করে ফেলবে। যে কারনে ভিকটিম ভয়ে সমস্ত ঘটনা গোপন রাখত। গত ইং ০২/০১/২০২৫ তারিখ ভিকটিম তার পিতার বাসায় আসার কথা ছিল কিন্তু না আসায় তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গত ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪.৫০ ঘটিকার সময় আসামীদের বাড়ীর পাশে এক ব্যক্তি ভিকটিমের চাচার মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায় যে উক্ত আসামীরা ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে তাদের ঘরের মধ্যে আটক করে রেখেছে।
উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার সময় ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব লামাপাড়া নয়ামাটি মার্কাস মসজিদ সংলগ্ন ১নং আসামীর বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পায় ১নং আসামীর রুমে জানালার গ্রিলের সাথে ভিকটিম গলায় ওড়না ও গামছা দ্বারা বাধা পা মাটিতে ডান হাতের আঙ্গুলে এবং বাম হাতের বাহু সহ গলায় লালচে দাগসহ মৃত অবস্থায় ঘাড় বেকে ঝুলছে। পুলিশ সংবাদ পেয়ে আসামীদের বাড়ীতে আসে এবং ভিকটিমের লাশের সূরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে মৃত দেহের ময়না তদন্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা মোহাম্মদ আলী (৪৬), পিতাঃ-মৃত মীর আলী বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৯, তারিখ ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ইং ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ০৪ নং আসামী মোঃ মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু (৫০), পিতা- মৃত তালেব হোসেন, সাং- নয়া মাটি (কুতুবপুর), থানা-ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জ’কে নারায়ণগগঞ্জ জেলার সদর ফতুল্লা থানাধীন নয়া মাটি (কুতুবপুর) এলাকা হতে ২১/০৫/২০২৫ ইং তারিখ ১৩১০ ঘটিকায় র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এছাড়াও আসামীর বিরূদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় বিস্ফোরক আইন, হত্যা চেষ্টা, মাদক, চুরিসহ ১৪ টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।