শাপলা গণহত্যার ১২ বছর : ন্যায়বিচার এখনও অধরা

আপলোড সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০১:৩৩:৪১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০১:৩৩:৪১ পূর্বাহ্ন
 

 
মুহাম্মদ নাদের চৌধুরী।

২০১৩ সালের ৫ মে। ইতিহাসের পাতায় এক ভয়াল রাত। ঈমান ও আকিদাভিত্তিক ১৩ দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দেয়া লাখো ধর্মপ্রাণ তাওহিদি জনতার ওপর রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে চালানো হয় ভয়াবহ হামলা। রাতভর চলা অভিযানে শহীদ হন বহু মাদরাসা ছাত্র, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট ও সাংবাদিকদের প্রবেশ। খবর প্রকাশের অপরাধে বেসরকারি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ফ্যাসিবাদী সরকার।

 
ঘটনার, ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হয়নি কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত, হয়নি হত্যাকাণ্ডের বিচার। বরং সেই সময় শাপলায় অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়, যা আজও অনেকের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে।

 
সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ঘোষণা না করা হলেও হেফাজতের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক এক খসড়া তালিকায় শহীদের সংখ্যা ৯৩ জন উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাধীন সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। রাতভর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রেখে কীভাবে অভিযান চালানো হয়েছিল, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো সরকারি বক্তব্য নেই।

 
শাপলা চত্বরের ঘটনা শুধু প্রাণহানিতেই শেষ হয়নি—পরবর্তী সময় সারাদেশে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় দুই শতাধিক মামলা। এগুলোর অধিকাংশই ছিল হয়রানিমূলক। বর্তমান সরকারের আমলে এই মামলা প্রত্যাহারের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও, মূল গণহত্যার বিষয়ে কোনো কমিশন বা তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি শুধু গণতন্ত্রের জন্য নয়, মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ বার্তা বহন করে।

 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি অন্য রাজনৈতিক সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন ও বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু শাপলার গণহত্যার প্রসঙ্গে এখনো নিরবতা অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠছে—আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক নন? তাঁদের জীবনের মূল্য কোথায়?

 
এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পূর্তিতে দেশের সচেতন মহল ও নাগরিক সমাজের কাছে দাবিগুলো জোরালোভাবে উত্থাপন করছে।
১. শাপলা চত্বর গণহত্যার একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
২. দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. শহীদ ও নিখোঁজদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব হয়রানিমূলক মামলা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।

 
শাপলার শহীদরা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া কোনো পরিসংখ্যান নন—তাঁরা ছিলেন, একদল ঈমানদার, শান্তিপ্রিয় নাগরিক, যারা ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাজপথে এসেছিলেন। আজ ১২ বছর পরও তাঁদের আত্মত্যাগের বিচার হয়নি। এই অবস্থায় নাগরিক সমাজ মনে করে, বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি বন্ধ না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র।




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]