রামেবিতে গাছ কর্তণের সময় হাতেনাতে আটক ৩, নেপথ্যে দেলোয়ার
রামেবিতে গাছ কর্তণের সময় হাতেনাতে আটক ৩, নেপথ্যে দেলোয়ার
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রামেবিতে থেমে নেই গাছ কর্তণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের মনগড়া বক্তব্য দিয়েও গাছ কর্তণ ও লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (২২ আগস্ট) রাজশাহী মহানগরীর সিলিন্দার রামেবির নির্মাণধীন ক্যাম্পাসে গাছ কাটার সময় হাতেনাতে তিনজন শ্রমিক আটক করে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিকে আঙ্গুল তুলছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষের ইন্দন ছাড়া ক্যাম্পাসে এত সিকিউরিটি থাকার পারও প্রকাশ্যে দিনে বেলায় কিভাবে গাছ কেটে নিয়ে যায় ? তাদের দাবি, শয়তান মাঠে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে আর সাধু নেপথ্যে থেকে ইন্দন দিচ্ছে। এই অপকর্ম বন্দের জন্য মাননীয় স্বাথ্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
আটককৃত কাছ কাটা শ্রমিকরা হলেন, রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার নতুন বুধপাড়া এলাকার আব্দুল মানানের ছেলে ওমর ফারুক (৩৫), একই এলাকার জুনাবিরের ছেলে উজির (৪৫) ও মোঃ কোরবান আলী (৪২)।
আটককৃত শ্রমিক ওমর ফারুক বলেন, আমরা ১২/১৩দিন যাবত সাতজন শ্রমিক গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি গাছ কাটা হয়। তারা আরও বলেন আমরা হোসেন কন্সট্রাকশনের ম্যানেজার হোসেন ভাইয়ের তত্ত¡াধায়নে থেকে কাজ করছি। কাটা গাছ নিয়ে যায় দেলোয়ার ভাইয়ের লোকজন। তিনি আরও বলেন, মোটা গাছগুলি খন্ড খন্ড করে কাটা হয়। আর সেই গাছের গুড়িগুলি দেলোয়ারের গোডাউনে নিয়ে রাখা হচ্ছে ফার্নিচারের জন্য। এ ব্যপারে হোসেন কন্সট্রাকশনের ম্যানেজার দেলোয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ভুলভাল মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করেন। অথচ কাছ কর্তণ ও শ্রমিক আটকের ঘটনা দৃশ্যমান। তারপরও তিনি বলার চেষ্টা করেন কাছ কাটা হচ্ছে না।
এর আগে শুক্রবার হোসেন কন্ট্রাকশনের ম্যানেজার দেলওয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, গাছ কাটার সাথে আমরা সম্পৃক্ত নই। মূলত আমরা কাজ করছি সামনের দিকে, আর এই গাছগুলো পেছনের দিক থেকে কাটা হয়েছে। কে বা কারা গাছগুলো কেটেছে আমরা জানি না। তবে ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। একদিন পরেই শনিবার তিনি নিজেই এই অপকর্ম করছেন তা প্রকাশ্যে এলো। এ ব্যপারে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মোঃ হাবিবুর রহমান। রামেবিতে গাছ কাটার সময় স্থানীয়দের সহযোগীতায় নিজন শ্রমিককে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ মামলা দিতে আসেনি। সরকারী মালামাল চুরি হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিনে পারে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তা পারে। আচ্ছা ছবি- ভিডিও গুলি আমার হোয়াটসঅ্যাপে দেন আমি দেখছি।
এ ব্যাপরে রামেবির রেজিস্ট্রার হাবিবুরের মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে, তিনি দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলেন, আমি এখন অফ ডিউটিতে আছি বলেই ফোন কেটে দেন। উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগরীতে ২০৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ক্যাম্পাস প্রায় ২০০টির বেশী গাছ কর্তণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২১ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহানগরীর শাহমখদুম থানার সিলিন্দায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ক্যাম্পাসের ২০৫ বিঘা জমিতে থাকা গাছ কর্তণের দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, ক্যাম্পাসে প্রায় সাড়ে ৫হাজার গাছ ছিল। বিক্রির জন্য গাছগুলোতে নম্বর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো দরপত্র বা কার্যাদেশ ছাড়াই গত ১০ মাস ধরে গাছ কাটা হচ্ছে। ফলে, গাছ- গাছালিতে ভরা এলাকার অনেক অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বালু ভরাটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হোসাইন কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড গাছ কেটে বিক্রি করেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছে।
হোসেন কন্ট্রাকশনের ম্যানেজার দেলওয়ার বলেন, গাছ কাটার সাথে আমরা সম্পৃক্ত নই। মূলত আমরা কাজ করছি সামনের দিকে, আর এই গাছগুলো পেছনের দিক থেকে কাটা হয়েছে। কে বা কারা গাছগুলো কেটেছে আমরা জানি না। তবে ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। অসংখ্য গাছ গোড়া থেকে কাটা হয়েছে। কিছু গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ঢাকা, আবার কিছু জায়গায় মাটি খুঁড়ে গাছ কাটায় বৃষ্টির পানি জমে পুকুরের মতো হয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে ড্রেন ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে কয়েক শত গাছ কাটা হয়েছে। শ্রমিকদের টিনের ঘরের পাশে কাটা আমগাছ পড়ে আছে। দক্ষিণ দিকে কাটা ডালপালা ও ফাঁকা জায়গা দেখা গেছে। পশ্চিমে প্রায় ১০ বিঘার একটি বাগানে সারি সারি গাছ কাটা অবস্থায় পানিতে পড়ে আছে। বৃষ্টির কারণে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, ক্যাম্পাস দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন মোঃ হাফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তাঁর গরু ও ভেড়ার ফার্ম অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আমের মৌসুমে ৪০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের সাবেক ছাত্রনেতা নামমাত্র মূল্যে বাগান ইজারা নিয়েছিলেন। গাছ কাটার চক্রের হোতা হাফিজুল, ওই ছাত্রনেতা, হোসাইন কন্সট্রাকশন, রেজিস্ট্রার ডা. হাসিবুল হোসেন, উপাচার্যের সহকারী নাজমুল হোসেন এবং প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রেজিস্ট্রার ডা. হাসিবুল বলেন, গাছ কাটার বিষয় আমি জানতে পারি, কিন্তু তা অফিশিয়াল নয়। আমি প্রকল্প এলাকায় যাই না। নাজমুল হোসেন বলেন, আমি কিছুই জানি না। হাফিজুল বলেন, আমার ফার্ম অধিগ্রহণের পর আমার কাজ শেষ। গাছ কে কেটেছে বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১০ মাস ধরে গাছ কাটা হলেও গত এক মাসে ব্যাপক কাটা শুরু হয়। দরপত্র ছাড়া গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলে হোসাইন কন্সট্রাকশনকে শোকজ করা হয়।
প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, গাছ বেআইনিভাবে কাটা হয়েছে। আমরা ঠিকাদারকে শোকজ করেছি। জবাবের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা গাছ কাটিনি। যেখানে গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে আমাদের কাজ নেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার অমুমোদন দিয়েছিলো মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা সাধারণ বাগান করবেন বা স্থায়ী যে গাছ লাগাবেন, সেগুলোও তারা তাদের ইচ্ছেমতো কাটতে পারবেন না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এরকম নিয়ম আছে। সৌদি আরবে ইউ ক্যান নট ইমাজিন। আমার বাড়িতে একটি গাছ পড়ে গেছে, এটা আমি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটতে পারব না। এটা ভারতেও আছে। এটাকে ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে বলা হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে সব বনাঞ্চলকে প্রটেকশন (সুরক্ষা) দেওয়া হয়েছে। সামাজিক বনায়নে থাকা গাছও এর আওতায় আসবে। এখানে বুঝতে হবে স্থায়ী গাছের কথা বলা হয়েছে। লাউ গাছ কাটতে কোনো সমস্যা নাই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স