আশিকুর রহমান শান্ত
ভোলা প্রতিনিধি:
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড ধরে চার স্তরীয় একাডেমিক পদসোপান চেয়ে ভোলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে "ভোলা জেলা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক পরিবার" এর আয়োজনে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: আ: রহিম, ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: মাকসুদুর রহমান, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: আকতার হোসেন, মো: আবু জাফর সুমন, মো: মামুনুর রশিদ, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মনিরুন্নেসা সুমি, সুমিতা রাণী দে, নাজমুন্নাহার সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ কি সফল তা অনেকাংশ নির্ভর করে ওই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন তার ওপর। যে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান যত বেশি উন্নত, সে দেশের সার্বিক উন্নয়ন তত সমৃদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার মান সর্বাগ্রে, চীনে শিক্ষকদের এতো মর্যাদা যার কারণে ছোট থেকেই ছেলে-মেয়েরা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। অপরদিকে জার্মানি শিক্ষকদের বেতন অন্য যে কোন প্রফেশন থেকে বেশি। এটা দেখে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যরা জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের কাছে দাবি করেছিলেন তাদের বেতন যেন শিক্ষকদের সমান করা হয়। উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘‘How can I compare you to those who taught you” উপরিউক্ত সকল দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা বিরাজ করছে। যেখানে শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকেন। ইউনেস্কো নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক দেশে শিক্ষাখাতে জিডিপির কমপক্ষে ৬% এবং মোট বাজেটের ২৫% অংশ বরাদ্দ রাখা উচিত। উনচল্লিশটি দেশে গবেষনায় দেখা গেছে, শিক্ষকদের ১৫% বেতন বৃদ্ধির কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা ৬%-৮% বৃদ্ধি পেয়েছে (সবারজন্য শিক্ষা-২০০৪)। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হিসেবে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতির হৃদপিন্ড এবং এই স্তরের শিক্ষকরা জাতির ফুসফুস। অথচ আজো এই স্তরের শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মাস্টার হিসেক্ষে গণ্য করা হচ্ছে, যা মানসম্পন্ন শিক্ষার্জনে পরিপন্থি। যে দেশের শিক্ষকরা ২য় শ্রেণির, তাদের দ্বারা প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি কীভাবে সম্ভব।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড আমাদের দাবি নয়, অধিকার। কেননা ১৯৭৩ সালে ১ম পে স্কেলে ৬ষ্ঠ গ্রেড/২য় শ্রেণি (গ্রেড সংখ্যা দশ এর মধ্যে) হিসেবে ৫ টি পদের জন্ম হয়। ১৯৯৭ সাল অর্থাৎ ৫ম পে স্কেলের পূর্বে এই ৫ টি পদের মধ্যে সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পদটি বাদে বাকি ৪ টি পদকে সমসাময়িক সময়ে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা প্রদান করা হয়। অথচ তৎকালীন সময়ে সবগুলো পদের একই নিয়োগ যোগ্যতা (অনার্স সহ মাস্টার্স) হলেও সহকারী শিক্ষক পদটিকে দ্বিতীয় শ্রেণির নন গেজেটেড মর্যাদা দেয়া হয়। দুঃখের বিষয়, দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা প্রদান করাও হয়নি। ১৯৯৭ পরবর্তী দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১২ সালে সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পদটিকে গেজেটেড মর্যাদা প্রদান করা হয়। আপসোসের বিষয়, এই পদটির সাথে এত অন্যায় কেন? পদটির সাথে এত বৈষম্য কেন?
চরম বৈষম্যের শিকার সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক পদটি। এই বৈষম নিরসনে সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পদটিকে গেজেটেড মর্যাদা অর্থাৎ এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে আজকের মানববন্ধন। মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ভোলা জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আজ এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছে।
এছাড়াও, ১৯৮০ সালে 'বিসিএস (শিক্ষা:সাধারণ শিক্ষা) কম্পোজিশন ও ক্যাডার রুলস-১৯৮০' এর মাধ্যমে ০১/০৯/১৯৮০ তারিখে বিসিএিস (সাধারণ শিক্ষা) নামে একটি বিসিএস (ক্যাডার) সৃষ্টি হয়।
উক্ত ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত দুটি শাখা। একটি হচ্ছে কলেজ, অন্যটি হচ্ছে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা। বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার অন্তর্ভুক্ত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কলেজ ও বিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদসমূহকে আলাদা আলাদা বিনন্ত করতে বস্তুত এই দুটি শাখা তৈরি হয়। এক ক্যাডারের দুটি শাখায় শিক্ষক-কর্মকর্তার নিয়োগ যোগ্যতা (অনার্স সহ মাস্টার্স) একই হওয়ার পরেও সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড/১০ গ্রেড আর কলেজের ১ম শ্রেণির গেজেটেড/৯ম গ্রেড। একই উদরে জন্ম নেয়া, একই নিয়োগ যোগ্যতায় সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক পদটি কেন এত বঞ্চিত? এই বঞ্চনার ইতিহাসে আরো পরিতাপের বিষয়, পদোন্নতি ছাড়া অনেক সহকারী শিক্ষককে অবসরে যেতে হয়। এর জন্যে কলেজের মতো আমরা ৪ স্তরীয় একাডেমিক পদসোপান চাই। উপযুক্ত পদসোপন থাকলে পদোন্নতির যথাযথ রাস্তা তৈরী হবে। বৈষম্যের শেষ কোথায়? এই ক্যাডারের হেড অফিস মাউসিতে মাধ্যমিক পরিচালনার জন্য কর্মকর্তার সংখ্যা খুবই নগন্য অন্যদিকে কলেজে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। হেড অফিসের এই বৈষম্য নিরসনে সর্বোপরি সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাকে মানসম্মত পর্যায়ে নিয়ে যেতে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিকল্প নেই। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানাতে চাই, আমাদের যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নিয়ে সরকারি মাধ্যমিককে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিনত করুন।