ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালকিনিতে অতিথিদের অ্যাপায়নকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১৫ ০১:০৬:৪১
কালকিনিতে অতিথিদের অ্যাপায়নকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি কালকিনিতে অতিথিদের অ্যাপায়নকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি

আশরাফুর রহমান হাকিম, কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি। 

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি কালকিনি সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সকালে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল রফিকুল ইসলাম সহ অতিথিবৃন্দ বিদ্যালয়ের চলমান নির্মান কাজ পরিদর্শনে আসেন। অতিথিদের অ্যাপায়ন কে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষকের ২ গ্রুপের মধ্যে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানাযায়। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অতিথিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অতিথিবৃন্দ চলে যাওয়ার পরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে খাবার খাওয়া (সিংগারা) কে কেন্দ্র করে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং এ হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মাঝে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। এমন ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে পাড়া মহল্লায় ও চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে সমালোচনার ঝড় বইছে।

আরোও জানাযায়, বর্তমান প্রধান শিক্ষক শ্যামা প্রসাদ পাল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আসলেও সহকারী শিক্ষকের মাঝে কোন পরিবর্তন আসেনি। যার বাস্তব প্রমাণ গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে অতিথিদের সামন্য সিংগারা খাওয়ানো কে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা।

বিদ্যালয় ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সহ অতিথিদের সাথে সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, ধর্মীয় শিক্ষক জয়নাল আবেদিন ও ভোকেশনাল শাখা শিক্ষক রায়হান উদ্দিন খাবার খাওয়ানোর সময় উপস্থিত ছিলেন। খাবারের বিষয় উক্ত বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক এনায়েত হোসেন ও গনিত শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান যে, খাবারের জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের বলেছেন কিন্তু আমাদের কেন বলেন নাই? শিংগারা খাওয়ার বিষয় নিয়ে প্রথমে প্রধানশিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেন ও আবুল কালাম কথা বলার একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের ২ গ্রুপ তর্কবিতর্ক জড়িয়ে পড়ে। তখন প্রধান শিক্ষক উভয় পক্ষকে তর্কবিতর্ক করতে নিষেধ করার পরেও সহকারী শিক্ষকরা তার কোন কথা কর্ণপাত করেনি।একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান ও এনায়েত হোসেনের সাথে খাবারের বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কে দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির  ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, আমরা জানি শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। আর সেই শিক্ষাকে ধ্বংস করছেন শিক্ষক। শিক্ষক যদি সামান্য সিংগারা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে মারামারি করেন। এর চাইতে লজ্জার ও জঘন্য কাজ কি হতে পারে? শিক্ষকদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কি শিক্ষাই নিবে? আর শিক্ষকরা কি শিক্ষাই দিবে বলেন? এবিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের মাঝে এমন ঘটনা এটা নতুন না, প্রায় সময় শিক্ষকরা অশালীন ভাষা ও নিজেরা একে অপরের ওপরে গায়ে হাত পযর্ন্ত দেয়। স্কুলে শিক্ষকের মধ্যে দু'টি গ্রুপ থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েরা ভালো ভাবে পড়াশুনাও করতে পারে না। যাহার বাস্তব প্রমাণ আপনারা এসএসসি-২০২৫ইং পরীক্ষার ফলাফল দেখে বুঝতে পারবেন। এবিদ্যালয়ে এমন খারাব ফলাফল আমরা কোন দিন দেখি নাই। আজ স্কুলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দেখার মত কেউ নাই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, আমাদের সময়ও শিক্ষকদের মাঝে এরকম ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে। শিক্ষকের মধ্যে ২ টি গ্রুপ থাকায় বিদ্যালয়ের ও আমাদের অনেক অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের ২ টি গ্রুপের শিক্ষকবৃন্দ বিষয়টি বুঝতে চায় না। কেন বুঝতে চায় না তাও আমাদের জানা নাই? প্রায় শিক্ষকদের মধ্যে মারামারি মত ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের অবস্থা এমন হয়েছে আমাদের কাছে মনে হয় কিছু শিক্ষক আমাদের পড়াশুনার জন্য বিদ্যালয় আসেন না, আসেন শুধু তার মারামারি ও দল ভারি করতে। এতে শিক্ষকদের কি লাভ আমরা জানি না? আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রাখতে হলে সমাজে সচেতন মহল ও প্রশাসনের এগিয়ে আসতে হবে। আর যদি অল্প সময়ের মধ্যে সচেতন মহল ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় বিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। বিদ্যালয়কে বাঁচান ও আমাদের পড়াশুনা করতে দিন। সর্বশেষ আমরা চাই এর সঠিক সমাধান। 

সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে অ্যাপায়নের (সিংগারা) বিষয় নিয়ে কোন ঘটনা ঘটে নাই। অ্যাপায়ন বিষয়টি নিয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যাই নাই। আর তর্কবিতর্ক বা হাতাহাতির কোন ঘটনা ঘটে নাই।

সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ের ঘটনাটি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অ্যাপয়নের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেন প্রধান শিক্ষকের রুমে অ্যাপায়নের বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদিনের সাথে তর্কবিতর্ক করেন। তখন আমি প্রধান শিক্ষক এর সাথে তর্কবিতর্ক করতে সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেনকে নিষেধ করায় একপর্যায় এনায়েত হোসেন আমার গায়ে ধাক্কা দেয়।

প্রধান শিক্ষক শ্যামা প্রসাদ পাল ২৯ জুলাই ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামান্য খাবারের (সিংগারা) বিষয় নিয়ে নির্ধারিত ক্লাশ বাদ দিয়ে আমার কক্ষ প্রবেশ করে সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ অ্যাপায়নের বিষয় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেন। একপর্যায়ে খাবারের বিষয় নিয়ে আমার কক্ষে বসে সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান এর সাথে সহকারী শিক্ষক এনায়েত হোসেন ও সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তর্কবিতর্ক করে। তখন আমি উভয় পক্ষকে তর্কবিতর্ক করতে নিষেধ করার পরেও তারা আমার নিষেধ অমান্য করে একপর্যায়ে আমার কক্ষে বসে উভয় পক্ষ তর্কবিতর্ক, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি করেন। কিন্তু কেউ কাউকে মারেন নি। তবে যে সহকারী শিক্ষকরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বেতম কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে শিক্ষা বিধিমালা গেজেট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

কালকিনি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, স্কুলে সামান্য সিংগারা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যান্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে  আইনানুগ  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ-উল আরেফীন বলেন, বিদ্যালয়ে আপ্যায়নের বিষয়ে নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে যে ঘটনা ঘটেছে তা আমার জানা নাই। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সরকারী বিধি মোতাবেক ঐ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ