ঢাকা , মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫ , ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘুষ দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক আ. লীগের প্রভাবশালী সমর্থক তাঁত বোর্ডের যুগ্ম সচিব আকরামুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১১ ১৮:৩৩:৫০
ঘুষ দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক আ. লীগের প্রভাবশালী সমর্থক তাঁত বোর্ডের যুগ্ম সচিব আকরামুজ্জামান ঘুষ দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক আ. লীগের প্রভাবশালী সমর্থক তাঁত বোর্ডের যুগ্ম সচিব আকরামুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক 

অভিযোগ আছে গত ৫ ই আগস্ট এর আগে ফ্যাসিবাদের স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকারের নানা পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ , সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ পন্থী বিভিন্ন কর্মচারী কর্মকর্তাদের একত্রিত করার চেষ্টা করেন যুগ্ম সচিব তাঁত বোর্ডের সদস্য আকরামুজ্জামান, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা আওয়ামী লীগের সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায় ফাঁস হয়ে যায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়া সচিব আকরামুজ্জামান এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে, শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এমপি সিনিয়ার  নেতাদের সাথে গভীর সম্পর্ক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সিটি কর্পোরেশন সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধভাবে নিয়োগ তদবির বাণিজ্য কমিশন ঘুষ দুর্নীতি  শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন কিন্তু এত প্রভাবশালী ফ্যাসিবাদের দোসর হয়েও এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে?


গত বছর ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতিবাজ আমলাদের সরিয়ে দেয় সরকার, কিন্তু অনেকেই ভোল পাল্টিয়ে এখনো রয়ে গেছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ।স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিণত হয়েছিল একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস শত শত কোটি টাকা লুটপাট করে খেয়েছেন ও বিএনপি-জামাত তকমা লাগিয়ে বহু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচুত্য  করেছেন, মেয়র তাপসের সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়ম আর একচ্ছত্র আধিপত্যের প্রধান হাতিয়ার ছিলেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সচিব আকরামুজ্জামান, তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন এবং তাপসের আমলে প্রতিটা নিয়োগে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ প্রদান করতেন। 


নিয়ম বহির্ভূতভাবে গোপালগঞ্জের ৯ স্বজনকে চাকরি দেন আকরামুজ্জামান কারণ তখন তিনি ছিলেন ওই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ইপিআই সুপারভাইজার পদে চাকরি করছেন লাইজু খানম। বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতনি কোটায় নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে সিটি করপোরেশনে করা চাকরির আবেদনে এই কোটাই উল্লেখ করেননি তিনি। শতচেষ্টায়ও যেখানে চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরা দেয় না, সেখানে কোটা উল্লেখ না করেও কোটায় চাকরি পেয়েছেন লাইজু।


লাইজুর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামে। একই গ্রামে বাড়ি ডিএসসিসির সাবেক সচিব আকরামুজ্জামানের। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তার বোন রোজিনা বেগমের মেয়ে লাইজু। সিটি করপোরেশনে চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, মূলত মামা আকরামুজ্জামানের সাচিবিক আদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন লাইজু।


শুধু ভাগ্নি লাইজু নন, সাবেক সচিব আকরামুজ্জামান কর্মরত থাকাকালে আরও আটজন আত্মীয়স্বজন সিটি করপোরেশনে চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত শুধু ভাগ্নি জামাইয়ের বাড়ি নড়াইলে। বাকি আটজনের বাড়িই গোপালগঞ্জে বলে জানা গেছে। তবে তারা বিভিন্ন জায়গার ঠিকানা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন।


আকরামুজ্জামান তৎকালীন ওই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব হয়ে আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের এমন ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ডে থাকা কোনো কর্মকর্তার স্বজন চাকরিপ্রত্যাশী হলে তাকে ওই নিয়োগ বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হয়। কিন্তু সাবেক সচিব নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাইজু খানমের বোন লিনা খানম ও ভাই মুশফিক উস শালেহীনও চাকরি করছেন ডিএসসিসিতে। রেজিস্ট্রেশন সহকারী (জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ) পদে লিনা। আর কার্যসহকারী পদে  নিয়োগ দিয়েছিলেন  মুশফিক কে। আকরামুজ্জামানের আরেক ভাগ্নি হামিমা খানম প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মী পদে নিয়োগদিয়েছিলেন। শুধু ভাগ্নে-ভাগ্নি নয়, আকরামুজ্জামানের প্রভাবে চাকরি পেয়েছেন তার ভাগ্নি জামাই মো. শাহীন মোল্ল্যা। তার বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কচুয়াডাঙ্গা গ্রামে। উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক পদে ডিএসসিসির সচিবের দপ্তরে নিয়োগ পেয়েছিলেন শাহীন।


সাবেক সচিব আকরামুজ্জামানের চার চাচাতো ভাইও নিয়োগ পেয়েছিলেন সিটি করপোরেশনে। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রেন্ট অ্যাসিসটেন্ট পদে যোগদান করেছেন মারুফ হাওলাদার। ইপিআই সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন  মো. শাকিল আহম্মেদ কে। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট স্প্রেম্যান সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন ছাব্বির আহমেদ কে। পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন সোহাগ হাওলাদারকে ।এর মধ্যে তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একসঙ্গে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন সোহাগ। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদেও কর্মরত ছিলেন বিষয়টি জানাজানি হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সোহাগ হাওলাদার সিটি কর্পোরেশনে আর কর্মে যোগ দেননি এবং সচিব আকরামুজ্জামান নিজেও জানতেন এবং জেনে শুনে অবৈধভাবে তাকে নিয়োগ দেন, যেখানে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দিতে পারতেন না ,সেখানে যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। 


৫ ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  পদত্যাগ করেন এবং সচিব আকরামুজ্জামান দপ্তরে আসা বন্ধ করে দেন এবং  সরকার তাকে তাঁত বোর্ডে বদলি করে দেন।


গোপালগঞ্জ সদরের কাজুলিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান আকরামুজ্জামান গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ও গোপালগঞ্জের নাম ভাঙিয়ে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। গোপালগঞ্জ সদরে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ক্রয় করেছেন, রয়েছে তার রাজধানী ঢাকার বনশ্রী রামপুরা যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল ধানমন্ডি গুলশান সহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্লাট , অভিযোগ আছে দেশের বাহিরে ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন কানাডায় বেগম পাড়ায় রয়েছে তার একাধিক বাড়ি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বজ্র, রাজস্ব, পরিবহন সহ একাধিক বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে শুধুমাত্র সচিব আকরামুজ্জামানের প্রভাবে আমাদেরকে ওএসডি করা হয়েছিল,আমাদের অনেক সহকর্মীকে চাকরি চ্যুত করা হয়েছে অন্যায় ভাবে অথচ ফ্যাসিবাদের একজন প্রভাবশালী দোসর হয়েও এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে? আরো বলেন, এই সিটি কর্পোরেশনের সমস্ত প্রকল্প থেকে উনি বিপুল পরিমাণ কমিশন বাণিজ্য করতেন অবৈধভাবে সিটি কর্পোরেশনের শত শত কোটি টাকার লোপাট করেছেন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর নাম তিনি তালিকাভুক্ত করেন এবং আন্দোলনে না যাওয়ার হুমকি দেন তিনি প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ছাত্র জনতার আন্দোলন দমাতে কঠোর ভূমিকা রেখেছেন। তাকে দ্রুত  চাকরি থেকে বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা হোক।


এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতি তাঁত বোর্ডে বসে তার বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী বলেন, আমরা অবাক হয়েছিলাম ৫ই আগস্টের পরে যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেখানে তিনি কিভাবে এখানে বদলি হয়ে আসলেন? গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে ঠিক তেমনি আকরামুজ্জামান তাঁত বোর্ডে বসেও ব্যাপক অনিয়ম ওর দুর্নীতি সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আকরামুজ্জামানের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 
যুগ্ম সচিব আকরামুজ্জামানের ঘুষ দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের আরও তথ্য নিয়ে আসছে দ্বিতীয় পর্ব।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ