জাহিদ হাসান চৌধুরী, ফেনী জেলা প্রতিনিধি।
ফেনী শহরস্থ রয়েল স্যালমন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ফেনী জেলা আয়োজিত "আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ঐক্য ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দেশের শীর্ষ আলেম, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, দেশের স্থায়ী শান্তি ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামপন্থীদের ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক বাক্স নীতিতে ইসলামপন্থীদের ঐক্য বিজয়ী হিসেবে চিহ্নিত হবে। মাইলস্টোন কলেজে অগ্নিকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতী ইউসুফ কাসেমী দা. বা.। সভায় বক্তারা বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এটি ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ফসল। যেখানে ছাত্র থেকে যুবক, পুরুষ থেকে নারী, আলেম থেকে আওয়াম সকলের রক্ত ঝরেছে।
দল-মত নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমেই এই বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠি নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থে এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বক্তারা আরও বলেন, এই সরকার যেন বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নাতীতভাবে বাস্তবায়ন করে। একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ ও নারী অধিকার কমিশন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের অফিস অনুমোদন বাতিল, মুফতী রেজাউল করিম আবরারের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ অন্যান্য সংস্কার কমিশন থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অপসারণ করে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
তাঁরা আরও বলেন, গোষ্ঠিগত স্বার্থে পরস্পর বিরোধে জড়ালে সকল পক্ষেরই ধ্বংস অনিবার্য। বর্তমান সংকটকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা জরুরি, না হলে দেশ আবারও ফ্যাসিবাদ ও বৈদেশিক প্রভাবের ভয়াল ছোবলের মুখোমুখি হবে। চট্টগ্রাম বন্দর, রোহিঙ্গা সমস্যা ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক পক্ষসমূহ এবং জাতীয় স্টেইকহোল্ডারদের সমন্বয়ে গ্রহণযোগ্য ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যেন জবাবদিহিতা মূলক সরকারব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
সভা থেকে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবসমূহ: ১. গোষ্ঠিগত ও দলীয় স্বার্থ পরিহার করে আন্তরিক ঐক্যই এখন সমাধান।
২. ইন্টেরিম সরকারের প্রতি অহেতুক চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে দায়িত্বশীল সহযোগিতা অব্যাহত রাখা।
৩. বিচার, নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীতভাবে সম্পন্ন করার দাবি।
৪. বিতর্কিত উপদেষ্টা, কমিশন সদস্যদের অব্যাহতি ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশননের অফিস অনুমোদন বাতিলের মাধ্যমে আস্থা পুনঃস্থাপন।
৫. চট্টগ্রাম বন্দর, রোহিঙ্গা ইস্যু ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বপক্ষীয় সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বক্তারা বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যই আমাদের প্রধান শক্তি। বিভক্তি ও হঠকারী রাজনীতি দেশের অর্জিত বিজয়কে ব্যর্থ করে দিতে পারে। সকল পক্ষকে এখনই দায়িত্বশীল ও বিবেকবান ভূমিকা পালন করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আল্লামা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, সাধারণ সম্পাদক মুফতী রেজাউল করিম আবরার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফেনী জেলা আমীর মুফতি আবদুল হান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঞা, জামিয়া মাদানিয়া ফেনীর নায়েবে মুহতামিম মুফতী আহমাদ উল্লাহ কাসেমী, ওলামা বাজার মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু সাঈদ, শর্শদী দারুল উলূম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইসমাইল হায়দার, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, খেলাফত মজলিস ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলী মিল্লাত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা নাজমুল আলম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জেলা সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জাহিদ হাসান চৌধুরী, মাদ্রাসাতুল হেদায়ার পরিচালক মুফতী মুহাম্মদ আলী, ওলামা বাজার মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আবদুল হালীম, জেলা ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আলী আহমদ ফোরকান প্রমূখ।
সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। সঞ্চালনায় জেলা সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতিকুল্লাহ আল মামুন, প্রচার সম্পাদক মুফতী সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী।