ঢাকা , বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫ , ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর হাতের মেহেদির রঙ না মুছতেই শহীদ হন রাকিব


আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-২২ ১৯:৩৪:৩২
স্ত্রীর হাতের মেহেদির রঙ না মুছতেই শহীদ হন রাকিব স্ত্রীর হাতের মেহেদির রঙ না মুছতেই শহীদ হন রাকিব

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি- নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বরিশালের বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের টকবগে যুবক রাকিব (২১)।


নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে রাকিব (২১) বিয়ে করেন, বরগুনার আমতলীর বাবা-মা হারা জান্নাতকে (১৮)। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গার্মেন্টস-কর্মী রাকিব তার নবপরিণীতা “প্রিয়তমা” স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ‘সুখের ঘর’ বেধেছিলেন। নির্মম বুলেটে সেই “সুখ- স্বপ্ন” তাদের তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।


দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই স্বামীকে ঘিরে সব স্বপ্ন-আশা যেন চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের। মুহুর্তে তিনি হয়ে যান বিধবা। আর রাকিবের ঠাঁই হয় নিকষকালো অন্ধকার কবরে। যেখানে তিনি গত একবছর ধরে “চির ঘুমে” শায়িত আছেন। রাকিব দিনমজুর বাবা, হার্টের রোগী মা, শারিরীক প্রতিবন্ধি ভাই ও নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।


গত বছরের ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন বাবা মোশারেফ হোসেন।


এদিন রাতেই বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। ২২ জুলাই সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের সাড়ে চার মাস পরে ২৮ নভেম্বর দুপুরে শহীদ রাকিব বেপারীর মরদেহ উপজেলার জম্বদ্বীপ গ্রামের পারিবারিক কবর স্থান থেকে উত্তোলন করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়। পরে আবার একই কবরে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রাকিব। তাকে হারানোর শোকে আজও বেদনাতুর তারা বাবা-মা-ভাই-বোনসহ স্বজন।


শোকাহত মা রাশিদা বেগম কান্না বিলাপ করে বলেন, বুকের ধন রাকিবকে হারিয়ে মোগো জীবনের সব সুখ চিরতরে শেষ অইয়া গেছে। কত স্বপ্ন ছিল পোলাডার- গ্রামের বাড়িতে ঘর বানাইয়া হেই ঘরে মোগো রাখবে। কত সখ কইররা নানীর কাছে বড় হওয়া অসহায় এতিম মাইয়াডারে পোলার বউ বানাইছিলাম। অর আতের মিন্দির রঙ না মুছতেই চোহের সামনে পোলার বউডা বিধবা অইয়া গেল।


আল্লাহ্ধসঢ় রাকিবরে না নিয়া মোরে নেলোনা কেন! শহীদ রাকিবের শোকে স্তব্ধ বাবা মোশারেফ হোসেন বলেন, বাবার কাঁন্দে সন্তানের লাশের চাইতে দুিনয়ায় ভারি আর কিছু নাই। কিছুতেই পোলাডারে হারনোর শোক সইতে পারছিনা। সবাইর কাছে মোর পোলার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন অরে জান্নাতবাসী করেন। রাকিবকে হারানোর পরে তার মায়ায় কবরের কাছাকাছি থাকতে ফতুল্লার ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে তার বাবা-মা ও ভাই স্থায়ীভাবে গ্রামের বাড়ি থাকছেন। প্রিয় রাকিবের কবরের কাছে গিয়ে তারা প্রতিদিন চোখের জলে ভাসছেন।


তার জন্য দোয়া করছেন। এদিকে রাকিবকে দাফনের কয়েকদিন পরে স্ত্রী জান্নাত তার নানীর সঙ্গে চলে যায়। যাওয়ার পরে শশুরবাড়ির কারও সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি তিনি। প্রসঙ্গত, গ্রামের বাড়ি বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামে রাকিবদের কোন ঘর নেই। জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করছেন তার চাচা নুরুল হক। ছেলে রাকিবের মরদেহ নিয়ে মোশারেফ হোসেন ও তার পরিবার গ্রামের বাড়ি ফিরে ঠাঁই নিয়েছিলেন সেই ঘরেই।


এখনও সেই ঘরেই তারা বসবাস করছেন। রাকিব শহীদ হওয়ার পরে তার পরিবার যে দান-অনুদান পেয়েছে তা দিয়ে বাড়িতে ঘর উত্তোলনের জন্য সম্প্রতি পুকুর ভরাট করে ঘরের ভিটি নির্মাণ করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় রাকিবের নিজ বাড়িতে ঘর নির্মানের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে এখন সেই “স্বপ্নের ঘর” উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়টিও ছেলে হারানো বাবা-মায়ের কাছে নিদারুন কষ্ট-যন্ত্রনার।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ