নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলামপন্থীদের ঐক্যের জন্য জামায়াতে ইসলামী উদার উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমীরে জামায়াত ইতোপূর্বে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের একটি ব্যালেট করতে যতটা ছাড় ও উদারতার প্রয়োজন হয় জামায়াতে ইসলামী তা করবে।
শুধু নির্বাচনের জন্যই নয় আগামী দিনে যাতে আলেমদের উপর আর কেউ জুলুম করতে না পারে সেজন্য সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাদের উপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করেছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার হয়েছে। তবে আলেমদের উপর বেশি জুলুম হয়েছে। আলেম সমাজ একই প্লাটফর্মে জোটবদ্ধ থাকলে আগামীতে কেউ আলেমদের উপর জুলুম করার দুঃসাহসিকাতা দেখাতে পারবে না। আলেমদের মাইনাস করে আধিপাত্যবাদ, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন কেউ দেখতে পারবে না।
স্বাধীনতা-সার্বভৌত্ব রক্ষার সকল আন্দোলন- সংগ্রামে আলেমদের অবদান ও ত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টও হাসিনা পালিয়ে যাবে এটা কেউ ভাবেনি। কিন্তু জীবনের মায়া ত্যাগ করে আলেমরাই ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আলেমরাই রাজপথে ছিল। বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব ইসলামপন্থীদের দিতে হলে অবশ্যই ঐক্যের বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি সব দল ও মতের নেতৃত্বকে একই প্লাটফর্মে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। রবিবার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ঐক্য ভাবনায় করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি তারুণ্যের অহংকার ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ১৭৫৭ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে ওলামা-মাশায়েখদের আন্দোলনের সামনের সারিতে রাখা হয়েছে। ইসলামপন্থীরা সামনের সারিতে থেকে জীবন ও রক্ত দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে ইসলাম বিদ্বেষীরা ঐ আন্দোলনের ভূমিকা হাইজ্যাক করে নিজেদের অর্জন দাবি করে। যা স্পষ্ট প্রতীয়মান ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলন। এই আন্দোলেন যাত্রাবাড়ী একটি মাদ্রাসার ১৭ জন ছাত্র শহীদ হলেও গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি দাবি করে তিনি নাকি যাত্রাবাড়ীতে ধর ধর বলে চিৎকার করছে আরই আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে! এতেই যাত্রাবাড়ী স্বাধীন হয়ে গেছে! যেখানে তিনি ইতিহাস বিকৃত করে একক ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সারাদেশে এই আন্দোলনে যত আহত হয়েছেন এবং শহীদ হয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ট আলেম, হাফেজ সহ ইসলামপন্থীরা আহত ও শহীদ হয়েছেন।
সবশেষে শহীদ হয়েছেন নোয়াখালীর কুরআনের হাফেজ হাসান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলামপন্থীদের নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যেই ন্যারেটিভ প্রচার করেছে সেটি জনগণের কাছে এখন পরিস্কার হয়ে গেছে। জনগণ বিশ্বাস করে ইসলামপন্থীদের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ ও দুর্নীতি মুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। যার প্রমান ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের দায়িত্ব পালন কালে ২ পয়সার দুর্নীতি হয়েছে বলে আজ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে পারেনি।
তাই ইসলামপন্থীরা জোর করে বলতে পারে, আগামীর বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব ইসলামী দলের হাতে গেলে একটি কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ গঠিত হবে। অন্য কোন দল বা মতাদর্শের দলের কাছে আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব গেলে আবোরা বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি আলেমদের উপরও জুলুমের ভয়াবহতা দেখা যাবে। তাই এখনই আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্ম পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় ইসলামপন্থীদের ঐক্য ভাবনায় করণীয় শীর্ষক মতামত উপস্থাপন করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ’র নায়েবে আমীর আহম্মদ আলী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাসার, এনসিপি'র কেন্দ্রীয় সংগঠক মাওলানা সানা উল্লাহ খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওলামা বিভাগের ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসেন, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাওলানা মোহাম্মদ শাহ আলম, মুফতি সাকীবুন কাসেমী, মাওলানা আকরাম হোসাইন, মাওলানা মিন সুফিয়ান, হাফেজ মাওলানা মুফতি আহম্মদ বিন হাবিব, মুফতি আবু নোমান রহমানী, মুফতি এমদাদ উল্লাহ, মুফতি ইমাজ উদ্দিন, মুফতি আব্দুল আজিজ প্রমুখ।