মুন্সিগঞ্জে পরকীয়ার জেরে স্বামী খুন র্যাব এর অভিযানে আসামী গ্রেফতার
মুন্সিগঞ্জে পরকীয়ার জেরে স্বামী খুন র্যাব এর অভিযানে আসামী গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
“মুন্সিগঞ্জে পরকীয়ার জেরে স্বামী খুন” র্যাব-১১ এর অভিযানে আসামী গ্রেফতার
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ গত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ হতে অদ্যবধি দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন অভিযানে চাঞ্চল্যকর অপরাধী ৬৪ জন, আরসা সদস্য-১৫ জন, হত্যা মামলায় ৮৭ জন গ্রেফতার, ধর্ষণ মামলায় ৪৬ জন গ্রেফতার, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় ০৯ জন গ্রেফতারসহ ৮২ টি অস্ত্র, ১২৭৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ২৫০ জন এর অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে র্যাব-১১। পাশাপাশি ৪১ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ৩৩ জন ভিকটিম উদ্ধার এবং ছিনতাইকারী ও ডাকাত ৫৪ জন, জেল পলাতক ৩৫ জনসহ অন্যান্য অপরাধী প্রায় ২৫২ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব-১১ জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২।
গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন মুক্তারপুর এলাকায় একটি হত্যার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বোন বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-২৯/১৪২, তারিখ- ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ইং ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে দ্রæত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। ৩।
ঘটনা সূত্র ও এজাহার পর্যালোচনায় জানা যায় যে, নিহত ভিকটিম জাহিদুল মোল্লা (৪০), পিতা- মৃত শহিদ মোল্লা, মাতা- ফিরোজা বেগম, সাং-উত্তর চাঁদত্রিশিরা, পোঃ-পয়সার হাট, থানা-আগৈলঝাড়া, জেলা-বরিশাল এর সাথে প্রায় ১৭ বৎসর পূর্বে ০১ নং বিবাদী নুপুর (৩২) এর বিবাহ হয়। বিবাহিত জীবনে ভিকটিমের ০১ মেয়ে, যাহার নাম সামিয়া (১৬) এবং ০১ ছেলে, যাহার নাম আহাদ (১১)। প্রায় ১০/১১ বছর পূর্বে ভিকটিমের স্ত্রীর সাথে এজাহারনামীয় ২ নং আসামী এমদাদুল (৪৫) এর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক হয়। ভিকটিম তার স্ত্রীকে উক্ত আসামীর সাথে হাতেনাতে অশালিন অবস্থায় ধরে। তথাপিও ভিকটিম তার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার স্ত্রী নুপুর (৩২) এর সাথে ঘর সংসার করতে থাকে। ইতোমধ্যে ভিকটিমের কন্যা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃস্বত্তা হলে গোপনে ভিকটিমের স্ত্রী ভিকটিমকে না জানিয়ে তার মেয়ের গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করে।
এই ঘটনার, বিষয়টি ভিকটিম জানতে পারায় ভিকটিম তার স্ত্রীকে বকাঝকা করায় ভিকটিমের স্ত্রী ৩১/০৫/২০২৪ তারিখ তাকে ডিভোর্স দেয়। ভিকটিমের খালু মোঃ খোকন পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে উভয়কে মিলিয়ে দেয়ার পর তারা পুনরায় ঘর সংসার করতে থাকে। এরপরেও ভিকটিমের স্ত্রী পুনরায় পরকিয়া সম্পর্ক বজায় রাখে যা পুনরায় ভিকটিম তাদেরকে হাতেনাতে ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪/১০/২০২৪ তারিখ রাত্রি অনুমান ০৮:০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে ০৩ নং বিবাদী আল আমিন মোবাইলে ভিকটিমের ভায়রার ছেলে হামিম (২২) কে কল দিয়ে ভিকটিমকে মুক্তারপুর সিএনজি স্ট্যান্ডের পিছনে যাওয়ার জন্য বলতে বলে। তখন হামিম ভিকটিমকে সেখানে যেতে বলে। ঐদিন রাত্রি অনুমান ০৮:৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন মুক্তারপুর সিএনজি স্ট্যান্ডের পিছনে জোড় পুকুর পাড় মোতালেব মিয়ার বাড়ীর সামনে ফাঁকা জায়গায় গেলে পূর্ব পরিল্পিতভাবে ৩ ও ৪ নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন আসামী মিলে ভিকটিমকে এলোপাথারী মারধর করে ও লাঠি দিয়ে পিটায়। যাহাতে ভিকটিম বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়।
তখন ভিকটিম অচেতন হয়ে মাটিতে ঢলে পড়লে আসামীরা ভিকটিমকে মুক্তারপুর সিএনজি ষ্টেশনের সামনে রাস্তায় নিয়ে আসে তখন পথচারী লোকজন আসামীদের ভিকটিম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তারা তাদের অপরাধ গোপন করার জন্য ভিকটিমের মৃগি রোগ হয়েছে বলে জানায় এবং তড়িঘরি করে ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে একটি মিশুকে করে দশকানি বড় মসজিদের কাছে রাস্তায় রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে দেখতে পেয়ে বাসায় খবর দিলে ০১ নং ভিকটিমের স্ত্রী নুপুর (৩২) উক্ত স্থানে আসে এবং লোকজনের চাপে ভিকটিমকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়।
অতঃপর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার জানায় যে, ভিকটিম পূর্বেই মারা গেছে। মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ ভিকটিমের মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে এবং লাশ ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করে। উক্ত সময়ে ০১ নং আসামী নুপুর (৩২) অপমৃত্যু সংবাদ দিলে উক্ত বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ থানার অপমৃত্যু মামলা নং-৩৯/২৪, তাং-১৫/১০/২০২৪ খ্রিঃ রুজু হয়। ভিকটিম জাহিদুল মোল্লা (৪০), ০১ ও ০২ নং আসামীর পরকিয়া সম্পর্কে বাধা হওয়ার কারনে উক্ত আসামীদ্বয় ৩, ৪ নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেকের সাথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে হত্যা করে।
উক্ত ঘটনায় নিহতের বোন খাদিজা বেগম (২৯) বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের সদর থানায় ভিকটিমের স্ত্রীসহ ০৪ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২৯/১৪২, তারিখ- ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ইং ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার, সাথে জড়িত এজাহারনামীয় ০৪ নং আসামী ইমন (২৫), পিতা- আলী হোসেন, সাং- আদারিয়াতলা মস্তি বাড়ী, থানা-মুন্সীগঞ্জ, জেলা- মুন্সীগঞ্জ ’কে মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন মুক্তারপুর এলাকা হতে অদ্য ইং ২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ ভোর ০৪০০ ঘটিকায় র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ এর একটি আভিযানিক দল আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স