কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন থাকে রোগীর চাপ, জনবল সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৮:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৮:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন


 
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
 
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-সরকারি ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। সপ্তাহের প্রথম রোববার এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। 


শুধু কালীগঞ্জ নয়, আশপাশের গাজীপুরের কাপাসিয়া, নরসিংদীর পলাশ এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকেও অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এই অঞ্চলের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের  কাছে হাসপাতালটি একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে।
 

শয্যা সংকট থাকা সত্ত্বেও আবাসিক বিভাগে প্রায় ৯০ জন রোগীকে ভর্তি রাখতে হয়েছে কেবিন ও ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করিডোর বা বাহিরে ঢালাও বিছানা দিয়ে রোগী ভর্তি করেন। কখনও কখনও একদিনে ৫০ জন নতুন রোগী ভর্তি থাকায় সবার প্রাপ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। 


রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, 
এ অবস্থায় চিকিৎসকরা আন্তরিক থাকলেও রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে সেবা দেওয়ায় ঘাটতি দেখা দেয়।
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। এর মধ্যে ৪ জন ডেপুটেশনে রয়েছেন—শিশু কনসালটেন্ট ডা. মুর্শিদা আক্তার এনআইসিভিডি, মেডিকেল অফিসার ডা. খালেদ মাহমুদ কাশিমপুর কারাগারে, ডা. রিয়াজুল রহমান ভূঁইয়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং ডা. কেএম ইসতিয়াক রোহান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 


এছাড়া ডা. বুশরা তাবাসসুম নামে একজন মেডিকেল অফিসার ২০২৪ সালের ৩ মার্চ থেকে অনুপস্থিত, একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও কাজে যোগ দেননি।
 

গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য-নাক-কানগলা কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন, দুজন সহকারী সার্জন এবং আয়ুর্বেদিক  চিকিৎসক নেই।
 
তৃতীয় শ্রেণির ৯২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬৮ জন, শূন্য ২৪টি। চতুর্থ শ্রেণির ২৫ পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৬ জন। শুধু দ্বিতীয়  শ্রেণির ৩৫ পদ পূর্ণ রয়েছেস্বাস্থ্য সহকারী, আয়া,  বাবুর্চি,মালি, এমএলএসসি, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার, নিরাপত্তা প্রহরী, এ্যাসিস্ট্যান্ট হেলথ ইন্সপেক্টর, স্টাফ নার্স, কার্ডিওগ্রাফার, ক্যাশিয়ার, হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট, হেলথ ইন্সপেক্টর, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর, স্টোর কিপার, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও টিকেট ক্লার্ক-সব পদেই জনবল সংকট রয়েছে।
 

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবদুল করিম বলেন, “এখানে চিকিৎসা পেতে ভিড় অনেক বেশি। ডাক্তাররা চেষ্টা করেন  সেবা দিতে, কিন্তু রোগীর চাপ এত  বেশি যে ঠিকমতো সময় পাওয়া যায় না। তবুও আমাদের মতো গরিব মানুষের ভরসা এই হাসপাতাল।”
 

কালীগঞ্জ উপজেলার গৃহবধূ রোকসানা আক্তার জানান, “ওষুধ আর অনেক পরীক্ষা বাইরে থেকে কিনতে হয়। তারপরও এখানে ডাক্তারদেখাতে আসি। কারণ গরীব মানুষ, প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে ডাক্তারকে অনেকগুলো টাকা ভিজিট দিতে হয়। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো আছেই। অনেক কম টাকায় ডাক্তার দেখাতে পারি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি, এজন্যই আসি।”
 

গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আসা বৃদ্ধা হাজেরা বেগম বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার টাকা নেই। এখানে ভিড়ের মধ্যেও ফ্রি চিকিৎসা পাই, তাই কষ্ট হলেও আসতে হয়।”
 

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রেজাউর হক বলেন, “গড়ে প্রতিদিন ৭–৮শ’ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। নির্ধারিত ৫০ শয্যার বাইরে আমরা ফ্লোরে বিছানা দিয়ে ভর্তি রাখি এবং পরে শয্যা খালি হলে রোগীদের স্থানান্তর করি।”
 

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশিদ বলেন, "এসব নিয়োগ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়। নিয়োগ সম্পন্ন হলে শূন্য পদগুলো পূরণ হবে।"
 

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান বলেন, “জনবল সংকট এখন সারাদেশেই সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় হাসপাতাল গুলোতে জনবল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে ধাপে ধাপে এ সংকট কেটে যাবে।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]