
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
ঋণের দায়ে পরিবারসহ আত্মঘাতী: রাজশাহীতে ২ গ্রামে চারজনের দাফন সম্পন্ন, রহস্যের জালে পুলিশী তদন্ত
ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট: জীবিত অবস্থায় কেউ দায়িত্ব নেয়নি। মৃত্যুর পর লাশ ভাগ করে দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে দুই পরিবার। শনিবার (১৬ আগস্ট) মহানগরীর টিকাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং বামনশিকড়ে পিতা-ছেলের দাফন সম্পন্ন হয়। তবে এই মর্মান্তিক ঘটনা চাপ দিয়ে পরিকল্পিত হত্যা, না নিছক আত্মহত্যা—এ নিয়ে রহস্যের ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে।
নিহতরা হলেন, মিনারুল ইসলাম (৩৮), তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) এবং মেয়ে মিথিলা (৩)। সিংড়া পুকুরপাড়ের উত্তর পাশের বাসিন্দা মিনারুল কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। প্রতিবেশীদের মতে, তিনি চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন; অভাবে থাকলেও কখনো কারও কাছে হাত পাততেন না। কিন্তু ঋণের জালে আটকে পড়ে তাঁর জীবন অসহ্য হয়ে ওঠে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে অভাব-অনটন আর ঋণের চাপে জর্জরিত এক কৃষক তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বাড়ির দুটি কক্ষ থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া দুটি চিরকুটে মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করেছেন নিহত মিনারুল ইসলাম।
ঘটনাস্থলে এক কক্ষের বিছানায় মনিরা ও মিথিলার মরদেহ পাওয়া যায়। পাশের কক্ষে মাহিমের লাশের পাশে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিলেন মিনারুল। পুলিশের ধারণা, চিরকুট দুটি মিনারুলেরই লেখা। প্রথম চিরকুটে লেখা: “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। কারণ, আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলে-মেয়ে কার আশায় বাঁচবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”
দ্বিতীয় চিরকুটে বিস্তারিত বর্ণনা: “আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারও কোনো দোষ নেই। কারণ, লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসাবে। আমি প্রথমে আমার বউকে মেরেছি, তারপর ছেলেকে, তারপর মেয়েকে। এরপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দেব।”
শনিবার সকাল থেকে মিনারুলের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা হাসান জানান, আনুমানিক পাঁচ বছর আগে নেশা ও জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে মিনারুল। এরপর বাবার ১৫ কাঠা জমির মধ্যে ৫ কাঠা জমি বিক্রয় করে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও পুরোপুরি ঋণমুক্ত হতে পারেন নি তিনি। এরপর তিনি নেশা ও জুয়া ছেড়ে ভালো হয়ে যান, এবং তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী কৃষক হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন ও সুদের চাপে পুরোপুরি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন আগে এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু সময়মতো ফেরত দিতে না পেরে, চাপের মুখে পড়েন।
প্রতিবেশী মোক্তার হোসেন বলেন, “মিনারুল অভাব-অনটনে জর্জরিত ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলত না। চুপচাপ সব সহ্য করত। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছিল, কিন্তু দিতে পারিনি।”
কৃষক হাসান আলী বলেন করেন, “এনজিওর লোকেরা টাকা না পেলে বাড়িতে বসে থাকত। মিনারুলের ছোট বোন নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, ভাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তা পরিবার জানত না।”
মিনারুলের মা আঞ্জুয়ারা বেগমের কণ্ঠে কান্না: “আমার ছেলেটা চাপা স্বভাবের ছিল। কোনো দিন আমাদের কাছে কষ্টের কথা বলেনি।”
ঘটনায় শুক্রবার রাতে মতিহার থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়। মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী অপমৃত্যুর মামলা করেন, অন্যদিকে শাশুড়ি শিউলি বেগম মিনারুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, “চিরকুটে মিনারুল তিনজনকে হত্যার পর আত্মহত্যার কথা লিখে গেছেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি এটা নিশ্চিত হয়, তাহলে হত্যা মামলা চলবে না; চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অন্যথায় তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে।”
ওসি আরও জানান, মিনারুলের কাছে অনেকে টাকা পেতেন; তাদের চাপ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার ময়নাতদন্তের পর লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শিউলি বেগম প্রথমে রাজি ছিলেন না। ভবিষ্যতের স্বার্থে আমরা বুঝিয়ে মামলা করিয়েছি।”
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, গ্রামীণ ঋণের ভয়াবহ চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলার এক করুণ উদাহরণ। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এমন ঘটনা আর না ঘটুক তার জন্য সমাজের সচেতনতা দরকার।
ঋণের দায়ে পরিবারসহ আত্মঘাতী: রাজশাহীতে ২ গ্রামে চারজনের দাফন সম্পন্ন, রহস্যের জালে পুলিশী তদন্ত
ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট: জীবিত অবস্থায় কেউ দায়িত্ব নেয়নি। মৃত্যুর পর লাশ ভাগ করে দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে দুই পরিবার। শনিবার (১৬ আগস্ট) মহানগরীর টিকাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং বামনশিকড়ে পিতা-ছেলের দাফন সম্পন্ন হয়। তবে এই মর্মান্তিক ঘটনা চাপ দিয়ে পরিকল্পিত হত্যা, না নিছক আত্মহত্যা—এ নিয়ে রহস্যের ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে।
নিহতরা হলেন, মিনারুল ইসলাম (৩৮), তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) এবং মেয়ে মিথিলা (৩)। সিংড়া পুকুরপাড়ের উত্তর পাশের বাসিন্দা মিনারুল কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। প্রতিবেশীদের মতে, তিনি চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন; অভাবে থাকলেও কখনো কারও কাছে হাত পাততেন না। কিন্তু ঋণের জালে আটকে পড়ে তাঁর জীবন অসহ্য হয়ে ওঠে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে অভাব-অনটন আর ঋণের চাপে জর্জরিত এক কৃষক তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বাড়ির দুটি কক্ষ থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া দুটি চিরকুটে মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করেছেন নিহত মিনারুল ইসলাম।
ঘটনাস্থলে এক কক্ষের বিছানায় মনিরা ও মিথিলার মরদেহ পাওয়া যায়। পাশের কক্ষে মাহিমের লাশের পাশে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিলেন মিনারুল। পুলিশের ধারণা, চিরকুট দুটি মিনারুলেরই লেখা। প্রথম চিরকুটে লেখা: “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। কারণ, আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলে-মেয়ে কার আশায় বাঁচবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”
দ্বিতীয় চিরকুটে বিস্তারিত বর্ণনা: “আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারও কোনো দোষ নেই। কারণ, লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসাবে। আমি প্রথমে আমার বউকে মেরেছি, তারপর ছেলেকে, তারপর মেয়েকে। এরপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দেব।”
শনিবার সকাল থেকে মিনারুলের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা হাসান জানান, আনুমানিক পাঁচ বছর আগে নেশা ও জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে মিনারুল। এরপর বাবার ১৫ কাঠা জমির মধ্যে ৫ কাঠা জমি বিক্রয় করে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও পুরোপুরি ঋণমুক্ত হতে পারেন নি তিনি। এরপর তিনি নেশা ও জুয়া ছেড়ে ভালো হয়ে যান, এবং তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী কৃষক হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন ও সুদের চাপে পুরোপুরি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন আগে এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু সময়মতো ফেরত দিতে না পেরে, চাপের মুখে পড়েন।
প্রতিবেশী মোক্তার হোসেন বলেন, “মিনারুল অভাব-অনটনে জর্জরিত ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলত না। চুপচাপ সব সহ্য করত। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছিল, কিন্তু দিতে পারিনি।”
কৃষক হাসান আলী বলেন করেন, “এনজিওর লোকেরা টাকা না পেলে বাড়িতে বসে থাকত। মিনারুলের ছোট বোন নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, ভাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তা পরিবার জানত না।”
মিনারুলের মা আঞ্জুয়ারা বেগমের কণ্ঠে কান্না: “আমার ছেলেটা চাপা স্বভাবের ছিল। কোনো দিন আমাদের কাছে কষ্টের কথা বলেনি।”
ঘটনায় শুক্রবার রাতে মতিহার থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়। মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী অপমৃত্যুর মামলা করেন, অন্যদিকে শাশুড়ি শিউলি বেগম মিনারুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, “চিরকুটে মিনারুল তিনজনকে হত্যার পর আত্মহত্যার কথা লিখে গেছেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি এটা নিশ্চিত হয়, তাহলে হত্যা মামলা চলবে না; চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অন্যথায় তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে।”
ওসি আরও জানান, মিনারুলের কাছে অনেকে টাকা পেতেন; তাদের চাপ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার ময়নাতদন্তের পর লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শিউলি বেগম প্রথমে রাজি ছিলেন না। ভবিষ্যতের স্বার্থে আমরা বুঝিয়ে মামলা করিয়েছি।”
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, গ্রামীণ ঋণের ভয়াবহ চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলার এক করুণ উদাহরণ। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এমন ঘটনা আর না ঘটুক তার জন্য সমাজের সচেতনতা দরকার।