
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার বনানীতে শিশা লাউঞ্জে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান ০২ আসামী’কে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আপনারা অবগত আছেন গত ১৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখ ভোর আনুমানিক ০৫:২৮ ঘটিকার সময় রাজধানী ঢাকার বনানীতে থ্রি সিক্সটি শিশা লাউঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানে এক যুবককে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
গত ১৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বনানী থানা এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী রাহাত হোসেন রাব্বী তার বন্ধু নুরুল ইসলাম খোকন সহ বনানী থানাধীন ১১ নং রোডস্থ হাউজ নং-১০০ লিফট এর ৪ তলায় থ্রি সিক্সটি শিশা লাউঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানে যায়। গত ১৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখ ভোর আনুমানিক ০৫:২৮ ঘটিকার সময় উক্ত ভবনের চতুর্থ তলা থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে দ্বিতীয় তলায় আসার সময় আসামী মুন্না এবং মাকসুদুর রহমান হামজা ভিকটিম রাহাত হোসেন রাব্বী’র পথরোধ করে দাড়ায়। তখন ভিকটি রাহাত মুন্নাকে চিনতে পেরে বলে যে, মুন্না তুই এই সময় এখানে কেন? উক্ত কথা বলা মাত্রই ভিকটিম রাহাতের সাথে আসামী মুন্না এবং মাকসুদুর রহমান হামজার তর্কবিতর্ক শুরু হয়। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে আসামী মুন্না তার পাঞ্জাবীর পকেটে থাকা ধারালো চাকু বের করে ভিকটিম রাহাত’কে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ভিকটিমের ডাক চিৎকারে আশে পাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় ভিকটিম রাহাত’কে রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় সিএনজি যোগে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
উক্ত ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারিত হয় এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১, সিপিসি-১ এর আভিযানিক দল বিষয়টি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক বিশ্লেষণ করে আসামী সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ র্যাব-১, সিপিসি-১ আভিযানিকদল বিশ্বস্ত সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে যে, আসামী মাকসুদুর রহমান হামজা (২৬), পিতা- আব্দুল আল মামুন মোল্লা, গ্রাম-গাংটিয়ারা বিল্লাল মেম্বার বাড়ী, থানা- দেবিদ্বার, জেলা- কুমিল্লা বর্তমানে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানা এলাকায় আত্নগোপনে আছে। তৎখনাৎ বিষয়টি র্যাব-১১, কুমিল্লা ক্যাম্প কে অবগত করা হয়। উক্ত সংবাদের ভিতিত্তে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এবং র্যাব-১১, কুমিল্লা ক্যাম্প এর যৌথ আভিযানিক দল সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানাধীন গামরুয়া এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসামী হামজা (২৬)’কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী হামজা’কে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় আসামী মুন্না (২৭) আশপাশ এলাকাতে অবস্থান করছে। হামজার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামী মুন্না (২৭), পিতা- আব্দুল ওহিদ, গ্রাম-মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, থানা-মোহাম্মদপুর, ডিএমপি, ঢাকা’কে ও কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানাধীন গামরুয়া এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হত্যা মামলা রুজু হওয়ার পর অতি দ্রুততার সাথে উক্ত ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী মুন্না ও হামজা’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়’কে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর আভিযানিক দল পূণরায় অভিযান পরিচালনা করে ১৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখ আনুমানিক ০১:০০ ঘটিকার সময় ডিএমপি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন রাজিয়া সুলতানা রোড এলাকা হতে বর্ণিত হত্যা কাজে ব্যবহৃত ০১টি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করে। আসামী মুন্না এবং হামজা’কে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় ভিকটিম রাহাতের সাথে আসামীদ্বয়ের দীর্ঘদিন যাবত বনানী শিশা লাউঞ্জে আসা যাওয়া এবং শিশা লাউঞ্জের ভিতর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ চলমান ছিল। উল্লেখ্য যে, ঘটনার দিন রাতে আনুমানিক ০১০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম রাব্বি আসামী মুন্নাকে উক্ত শিশা লাউঞ্চ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। যার ফলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভিকটিম রাহাত’কে হত্যা করা হয়েছে বলে আসামীদ্বয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত ০১ নং আসামী মুন্না (২৭) এবং ০২ নং আসামী মাকসুদুর রহমান হামজা(২৬)’কে সুস্থ অবস্থায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ডিএমপি ঢাকার বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে উল্লিখিত ঘটনায় রাহাতের বাবা রবিউল আওয়াল বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাহা বনানী থানার মামলা নং-১৭, তারিখ-১৫/০৮/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-৩৪৪/৩২৩/৩২৪ /৩২৫/৩২৬/ ৫০৬/৩০২/১১৪ /৩৪ পেনাল কোড।