
রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে হত্যা মামলাসহ ২২টির অধিক মামলার পলাতক আসামি, স্বঘোষিত সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নজরুল ইসলাম জুলুস (জুলু) গ্রেপ্তার হয়েছেন। বুধবার (২ জুলাই) দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া ও খুলিপাড়া এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযান পরিচালনায় সেনাবাহিনী নজরুল ইসলাম জুলুর বাড়ি ঘিরে ফেলে তল্লাশি চালায়। এ সময় তার ছেলে জিম ইসলাম (২৫) ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. মুন্না (২৩)কেও আটক করা হয়।
পুলিশের সিডিএমএস তালিকা অনুযায়ী, জুলুর বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বাস্তবে তার বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা ২২টিরও বেশি, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, অবৈধ অস্ত্র বহন, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা সন্ত্রাসমূলক অভিযোগ।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ঢাকার ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আসামি জুলু। ওই মামলার চার্জশিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও আসামি তালিকায় রয়েছে বলে একটি উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে।
অভিযানের আগের দিন (মঙ্গলবার), জুলুর দুই ভাতিজার নেতৃত্বে রাজশাহী নগরীর বাসার রোড এলাকায় প্রকাশ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী যুবক সিয়াম ইসলাম।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জুলু বিএনপি ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে তিনি রাজশাহী প্রেসক্লাব দখল করে একে টর্চার সেলে পরিণত করেন এবং একটি সন্ত্রাসী চক্র পরিচালনা করেন। চক্রের সদস্যরা চাঁদাবাজি, হুমকি, নির্যাতন ও হয়রানিতে যুক্ত ছিল। জুলুর ছেলে, ভাতিজা ও নিকট আত্মীয়রাও এসব অপকর্মে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
সেনাবাহিনীর সফল অভিযান কেবল একজন পলাতক আসামিকে আটক করাই নয় বরং পুরো একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। শহরজুড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে, অনেক জায়গায় স্থানীয়রা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করেন। রাতে জুলুর দখলে থাকা প্রেসক্লাব ভবনে তালা ঝুলিয়ে তা পুনর্দখল করে সাধারণ সাংবাদিকরা।
রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক সাইদুর রহমান বলেন, জুলু প্রেসক্লাবকে ভয় ও নির্যাতনের ঘাঁটিতে পরিণত করেছিলেন। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজন পর্যন্ত তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নিজের পুত্রবধু ও নিকট আত্মীয়কে যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
অভিযান শেষে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তারকৃতদের বোয়ালিয়া মডেল থানায় হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করে এবং অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে।
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক হোসেন বলেন, জুলুসহ গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা তাদের রিমান্ডে এনে অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি চক্রটির মূল নেটওয়ার্ক উন্মোচনে কাজ করছি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই সাহসী, সুনির্দিষ্ট ও তথ্যভিত্তিক অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ, সচেতন নাগরিক ও সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, এমন কঠোর পদক্ষেপই পারে সাংবাদিকতা, প্রশাসন ও রাজনীতি থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির চক্র উপড়ে ফেলতে।