
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য, হারিয়ে যাচ্ছে উপকারি পাখি। কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় মিল কল- কারখানা, রাসায়নিক বর্জ্য, চায়না ও কারেন্ট জালের ব্যবহারের ফলে মারা পড়ছে কৃষিবান্ধব পোকা ও পাখি। মানুষের আগ্রাসন অপরিকল্পিত নগরায়ণে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে গাছ।
বনাঞ্চলের সঙ্গে কমছে প্রাণীর সংখ্যাও। খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট, অবৈধ শিকার, পাচার, কীটনাশকের অতি ব্যবহারের মতো নানা কারণে প্রতি বছরই পৃথিবী থেকে কোনো না কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। তানোরে প্রায় বিলুপ্তির পথে জীববৈচিত্র্য। গাছ-পালা নিধন দ্রুত শহরায়নের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন ধরনের চিরচেনা পাখি।
জানা গেছে, তানোরে কৃষিতে অনুমান নির্ভর হয়ে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, মিল কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, চায়না ও কারেন্ট জালের ব্যবহারের ফলে মারা পড়ছে কৃষিবান্ধব পোকা ও পাখি। রাস্তার দুপাশে গাছ, ক্যানাল এর দুপাশেরসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠের ধারের বড় বড় গাছ, কলকারখানা, ইটভাটা, ফিড কারখানা ও আবাসস্থল তৈরির জন্য গাছ এবং বনজঙ্গল নির্বিচারে কেটে ধ্বংস করে জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখিদের হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
একটা সময় বিল ও জলাশয়ের ধারে দল বেধে নামত দেশি সাদা বক, ঘুঘু, দোয়েল ময়না নানা ধরনের পাখি। কৃষকের লাঙ্গল দিয়ে জমি কর্ষণ ও ফসল কাটার সময় পাখির দল কৃষককে ঘিরে ধরত। ওই পাখির দল ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেযে পেট ভরত। অথচ জীববৈচিত্র্যে আদরমাখা দেশি পাখি এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমি ও কিছু জলাশয়ে শীতের মৌসুমে দেখা মেলে স্বল্পসংখ্যক পাখির।
স্থানীয়রা জানান, এক দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ধানের ক্ষেতে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করার সময় দেখা যেতো শত শত সাদা বক ও বিভিন্ন দেশী পাখি। এইসব বক ও পাখি উড়ে এসে কৃষক ও লাঙ্গলের ফলার চার পাশে ঘিরে কিচিরমিচির শব্দে উড়ে উড়ে পোকা খেত। কখনো ঝাঁক ধরে উড়ে যেত আকাশে। কখনো আবার এক জমি থেকে অন্য জমিতে উড়ে গিয়ে বসতো। এরই মাঝে ধরে ধরে জমি থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খেতে। অপূর্ব এই কোলাহল দেখে মুগ্ধ হত পথচারীরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাদা বক ও পাখি আমাদের অনেক উপকার করে। চারা ধানের জমিতে ফড়িং, মাজরা পোকাসহ ক্ষতিকারক খেয়ে ফসল রক্ষা করতো পাখির দল। এছাড়া ফসলের খেতে পানি দেওয়ার পর যেসব পোকা পানিতে ভাসতে থাকে তারা তা খেয়ে সাবাড় করে। এতে ফসলের উপকার হয়। কিন্তু এখন সৌন্দর্যের প্রতীক এই সাদাবক ও পাখি আগের মতো আর দেখা যায় না। আবাসিক এলাকা ফসলি মাঠে বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য, নির্বাচারে বৃক্ষনিধন ও পাখি শিকারিদের ফাঁদে পড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে এসব উপকারী পাখি।
পাখি সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জীব ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) সহসভাপতি শাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, পাখি প্রকৃতির একটি গুরুত্বপ‚র্ণ অংশ। যেমন তাদের আবাসস্থল ঠিক রাখা উচিত তেমনি তাদের খাদ্যের উৎস রক্ষা জরুরি। পাখি শুধু পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, কৃষি ও কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে।
এছাড়াও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। তাই পাখি সুরক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আবাসস্থল সংরক্ষণ, শিকার ও পাচার বন্ধ নিশ্চিত করতে সকলকে সচেতন হতে হবে।