মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিম রাজু : বাংলাদেশের বাউল সংগীতাঙ্গন আজ গভীর শোকাহত। বহু বছর ধরে বাউল সাধনায় নিবেদিত প্রাণ, খ্যাতিমান বাউল সাধক শাহ খোয়াজ মিয়া আজ (২৬ জুন ২০২৫) দুপুর আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে পরলোকগমন করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তার মৃত্যুতে লোকসংগীতজগত, বাউল সম্প্রদায় এবং অগণিত শ্রোতার হৃদয়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শাহ খোয়াজ মিয়া ছিলেন একাধারে গায়ক, সাধক ও মরমি ভাবধারার ধারক। তার কণ্ঠে ছিল আত্মার সুর—যেখানে মিশে থাকত প্রেম, দার্শনিকতা ও মানবতার বাণী।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা, শাহ খোয়াজ মিয়ার জন্ম পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। গ্রামীণ পরিবেশেই তার সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। ছোটবেলা থেকেই বাউল গান, একতারা ও দোতারার সুরে ডুবে যেতেন। লেখাপড়ায় বেশি অগ্রসর না হলেও জীবনের বাস্তবতা, সাধনা ও গানের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন একজন আত্মস্থ সাধক।
সংগীত সাধনা ও দীক্ষা, তার সংগীতজীবনের গুরু ছিলেন বাউল শাহ গফুর মণ্ডল, যিনি তাকে লালনের ভাবধারায় পথ দেখান। গুরুপ্রদত্ত সেই দীক্ষা ও নিজস্ব সাধনার মিশেলে গড়ে ওঠে এক মরমি শিল্পী—শাহ খোয়াজ মিয়া। তিনি বিশ্বাস করতেন, “মানুষই মন্দির, মানুষের মাঝেই সত্যকে খুঁজতে হয়।” এই দর্শনই ছিল তার সংগীত ও জীবনের মূলভিত্তি।
উল্লেখযোগ্য গান, শাহ খোয়াজ মিয়া জীবনে অসংখ্য গান গেয়েছেন। তার কণ্ঠের কিছু গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে— “লাগাইয়া পিরিতের ডুরি” “আমার বাড়ি আয়রে বন্ধু” “বন্ধু রংগিলা রংগিলা রে” “নয়ন জলে সাঁতার শিখে, মন দিলাম গাঙে” এই গানগুলো শুধুই গান নয়, এগুলো বাউল দর্শনের জাগ্রত বাণী।
জীবনচর্চা ও সাধনা তিনি ছিলেন, বাউল জীবনের এক নিঃশব্দ সাধক। পোশাকে ছিল সাদামাটা, আচরণে ছিল বিনয়। হাতে একতারা, কাঁধে গামছা, চোখে প্রেম—এভাবেই সারাটি জীবন কাটিয়েছেন মাঠে-ঘাটে, মেলায়-মানুষে গান শুনিয়ে।
তার জীবন দর্শনের মূল কথা ছিল— সত্যের সন্ধান নিজের ভিতরে। বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, অন্তর্জগতই মূল।
ইন্তেকাল ও শোক, ২৬ জুন ২০২৫, দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে নিজ বাড়িতে তার ইন্তেকাল হয়। তার মৃত্যুর খবরে গোটা বাউল সমাজ, শিল্পীমহল ও হাজারো শ্রোতা-অনুরাগী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে তার স্মরণে দোয়া মাহফিল ও সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হয়েছে।
সমাপ্তি কথা, শাহ খোয়াজ মিয়ার ইন্তেকাল কেবল একজন গুণী শিল্পীর প্রয়াণ নয়—এটি এক জীবন্ত দর্শনের অবসান। তার গান, সাধনা ও জীবনদর্শন এ প্রজন্মকে যেমন আলোকিত করেছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রয়ে যাবে চিরন্তন প্রেরণা হয়ে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন।