ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বদলগাছীতে মাদরাসা উন্নয়ন কাজের চিহ্ন নেই, অনুদানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১৪ ২১:০৬:০৯
বদলগাছীতে মাদরাসা উন্নয়ন কাজের চিহ্ন নেই, অনুদানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ বদলগাছীতে মাদরাসা উন্নয়ন কাজের চিহ্ন নেই, অনুদানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ

বদলগাছী উপজেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ : মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু। নওগাঁ জেলা পরিষদের আওতায় বরাদ্দকৃত এডিবি প্রকল্পের অনুদানের অর্থে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কদমগাছী-কাদিমপুর হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা শিশুসদনে। সংশ্লিষ্ট অনুদানের টাকার ব্যবহার নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা ও নানা প্রশ্ন।

জানা যায়, প্রায় এক বছর পূর্বে মাদরাসার জন্য বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রদান করা হলেও বর্তমানে সেখানে এমন কোনও কাজের অস্তিত্ব নেই। সরেজমিনে মাদরাসা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, না নতুন কোনও অবকাঠামো, সংস্কার বা উন্নয়নকাজের চিহ্ন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মাদরাসা কমিটি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়-দায়িত্ব নিয়েও।

মাদরাসা কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. রাশেদুল ইসলাম (বকুল) মুঠোফোনে জানান, মাদরাসার সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের জন্য দুইলক্ষ টাকার বরাদ্দ পেয়েছি কিন্তু পুরোপুরি দুই লক্ষ টাকা হাতে পাইনি। কারণ, এই দুই লক্ষ টাকা পাইতে সংশ্লিষ্টদেরকে কমিশন দিতে হয়েছে। কাকে কতটাকা কমিশন দিতে হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মাস্টার বলতে পারবেন। অবকাঠামোর কি কি উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ করা হয়েছে অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও কোনও কাজই করা হয়নি। টাকা পাওয়ার বেশ কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও কোনও কাজ হয়নি তাহলে এই টাকা কোথায় কার কাছে আছে অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মাস্টার বলতে পারবেন, আমি জানি না।

তবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মাস্টার বলেন ভিন্ন কথা। তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে মাদরাসার উন্নয়ন কাজের জন্য আমরা ২ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছি। তার মধ্যে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে আগে বন্ধক রাখা জমি ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছি। অবকাঠামো উন্নয়নের টাকা দিয়ে মাদরাসার উন্নয়ন না করে বন্ধকী জমি মুক্ত করেছেন এ ব্যাপারে বরাদ্দকারী কর্তৃপক্ষের সম্মতি বা অনুমতি ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান। আর পূর্বে জমি বন্ধকীর টাকা দিয়ে কি কাজ করা হয়েছিল এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মীর আব্দুস সবুর মুঠোফোনে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তিনি এই কাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বলে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, প্রকল্পে কাজ হয়নি, এটা আমি জানি এবং এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এটাও সত্য, প্রথম কিস্তির টাকা ছাড় হয়েছে, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ এখনো ছাড় হয়নি। কাজ না করলে দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়া হবে না।

তবে তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। তবে জেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী, উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে হয় নির্ধারিত খাত ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও জানেন না মাদরাসায় দুইলক্ষ টাকা অনুদান এসেছে। তারা বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের কাছেই প্রথম জানতে পারলাম। প্রায় এক বছর পূর্বে টাকা পেয়েও মাদরাসায় কোনও কাজ করা হয়নি। অথচ অনুদানের এই টাকা কোথায় ও কীভাবে খরচ হলো? এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ হলেও বাস্তবে মাদরাসায় কোনও কাজই হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বিষয়টিকে অর্থ আত্মসাতের অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

এদিকে, উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে এমন অনিয়মে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এবিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনির সাথে কথা হলে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ