শহিদুল ইসলাম, প্রতিবেদক।
সাংবাদিকতা এক মহান পেশা। অন্যান্য লাভজনক পেশা রেখে যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই অর্থকে জীবনে প্রাধান্য দেননি। উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বাঘের মতো ভয় পায়। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাদের সাড়ে তিন ইঞ্চি কলম ও সততা।
সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেশ, জাতি ও কমিউনিটির বিরাট অবদান রাখে। হলুদ সাংবাদিকতা যেমন পরিত্যায্য, তেমনি সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে সমাজে প্রমোট করা আমাদের দায়িত্ব। ফ্রান্স দর্পণের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।
৯ আগস্ট ২০২৫, রবিবার প্যারিসের এক অভিজাত হলে আয়োজিত ফ্রান্স দর্পণের “১০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫” শীর্ষক অনুষ্ঠানে কীনোট স্পিকার হিসেবে মূল বক্তব্য প্রদানকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন বিশিষ্ট লেখক, প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ ও বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিন বারের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
ফ্রান্স দর্পণের নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক ফেরদৌস করিম আখঞ্জী ও ইশারাত মেঘলার যৌথ সঞ্চালনায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, ফ্রান্স দর্পণের সম্পাদক সাংবাদিক সামছুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড বাংলা সার্ভিসের খ্যাতিমান সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন, ফ্রান্স বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জুনায়েদ আহমেদ প্রমুখ। স্কটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এসএমপি ফয়সল চৌধুরী অনুষ্ঠানে আসতে না পেরে অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করে সংক্ষিপ্ত ভিডিও ম্যাসেজ পাঠান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষাবিদ ও ফ্রান্স কমিউনিটি প্রবীন ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, মোজ্জামেল হক, ফ্রান্স দর্পণের প্রকাশক মিয়া মাসুদ এবং এমডি নূর, রাজনীতিবিদ মিল্টন সরকার, ফারুক আহমেদ, মামুন মিয়া, শাহিন আরমান চৌধুরী, নাজমুল কবির, ফ্রান্স ক্রিকেটে বোর্ডের সদস্য সোনিয়া জামান প্রমুখ এবং ফ্রান্স ও ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে সাংবাদিক, কমিউনিটি নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের অবদান ছিল অপরিসীম। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। এতো কিছুর পরও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার জুলাই ঘোষনায় প্রবাসীদের অবদান পাশ কাটিয়ে যাওয়া হতাশাজনক। অবিলম্বে জুলাই ঘোষনা সংশোধন করে প্রবাসীদের অবদান অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ আরো বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার তাদের নূন্যতম মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। আসন্ন নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের আরো একটিভ ও দৃশ্যমান তৎপরতা আমরা দেখতে চাই। প্রবাসে অবস্থানরত দেড় কোটি প্রবাসীদের সোচ্চার হতে হবে। এই কমন ইস্যুটির দাবি যৌক্তিক পরিনতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে যার যার অবস্থান থেকে ক্যাম্পেইন ও আন্দোলন করে যেতে হবে।
ফ্রান্স দর্পণের সম্পাদক সাংবাদিক সামছুল ইসলাম বলেন, দশ বছরের পথচলায় আমরা সবসময় প্রবাসীদের কথা বলেছি। তাদের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সমাজের দর্পণ। তিনি সাংবাদিকদের গুনগত মান বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
দশ বছর পূর্তিতে প্রবাসী গুণীজনদের সম্মাননা দিয়েছে ইউরোপে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম গণমাধ্যম ফ্রান্স দর্পণ। অনুষ্ঠানে প্রবাসী সমাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের হাতে অনুষ্ঠানে কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। সংস্কৃতি, সমাজসেবা, ইসলামী ও নৈতিকতা শিক্ষা, উদ্যোক্তা, ক্রীড়া উন্নয়নসহ একাধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
ইসলামী ও নৈতিকতা শিক্ষা ক্যাটাগরিতে শাঈখ বদরুল বিন হারুন এমসিসি ইনিস্টিউটের প্রিন্সিপাল, বর্ষসেরা সামাজিক সংগঠন ক্যাটাগরিতে বিসিএফ, বর্ষসেরা নারী অধিকার কর্মী ক্যাটাগরিতে বিকশিত নারী সংঘের সভানেত্রী সৈয়দা তাওফিকা সাহেদ, বর্ষসেরা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে মো. ফেরদৌস রহমান ও বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে নাজিবুল্লাহ পিয়াস এই সম্মাননা পান।
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, এই স্বীকৃতি আমাদের দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিবে। অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন সংগীত শিল্পী প্রিয়ন্তি ও মৌসুমি চক্রবর্তী।