রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে আজ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে, শাহজাদপুর স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনসমূহ।
৩ আগস্ট রবিবার সকাল ১০ টায় শাহজাদপুরের বিসিক বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। শাহজাদপুর সচেতন নাগরিকের ব্যানারে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি শাহজাদপুর, শাহজাদপুর উপজেলা জামাত ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি শাহজাদপুরের প্রতিনিধিগণ। এছাড়াও, শাহজাদপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা সামাজিক সংগঠন এতে অংশ নেয়।
এসময় বক্তারা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে ঝোর দাবি জানান। স্থানীয়দের এই কর্মসূচিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এরপর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ-সময় সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ইয়াতসিংহ শুভ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি’র অনুমোদন নিয়ে ক্রমাগত অবহেলা ও কালক্ষেপণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আলাদা দুটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ গত ২৬ জুলাই ২০২৫ তারিখ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসের সকল কর্মসূচি বয়কট করার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরম্ভ করেন। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, মহাসড়কে প্রতীকী ক্লাস, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি কর্মসূচি পালিত হয়। আজ আন্দোলনের একাদশতম দিন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে এসে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারের নিকট ক্রমাগত দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নয় বছর ধরে ধুঁকতে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত নগণ্য অঙ্কের ডিপিপি অনুমোদনে সরকারের এই নির্লিপ্ততা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।
আমরা কি ধরে নেব যে, ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় বলেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না? একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নেই, নিজস্ব ভবন নেই, নেই অপরাপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুযোগ-সুবিধা। অথচ এটি সরকারের প্রতিষ্ঠান, সরকারের দায়িত্ব। কেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাম্পাসের দাবিতে রাজপথে নামতে হবে! রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা ও বারো শত শিক্ষার্থীর প্রতি সরকার কি একটু মনোযোগ দিতে পারে না! রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশকয়েকজন উপদেষ্টা নিজেই শিক্ষক। প্রায় সবাই শিক্ষাপরিবারের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। এমন উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস ও প্রত্যাশা। আপনারা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করুন, তাদের প্রতি সদয় হোন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপি অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আপনারা আমাদের কণ্ঠ হয়ে কথা বলছেন। শাহজাদপুরের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আপনার কষ্ট স্বীকার করেও আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। নিশ্চয়ই এই অন্ধকার কেটে যাবে।
আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি নিম্নরূপ- ১.৪ আগস্ট ২০২৫, সোমবার সকাল ১০টা- ১২টা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক (একাডেমিক ভবন ২-৩) অবস্থান কর্মসূচি ও পথনাটক।
২. ৬ আগস্ট ২০২৫, বুধবার সকাল ১০টা- ১২টা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক (একাডেমিক ভবন ২ থেকে ৩) অবস্থান কর্মসূচি ও শিকলভাঙার গান।
৩. ৭ আগস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা-১২টা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক (একাডেমিক ভবন ২ থেকে ৩) অবস্থান কর্মসূচি ও অর্ধবেলা প্রশাসনিক কর্মবিরতি।
৪. ১০ আগস্ট ২০২৫, রবিবার সকাল ১০টা- বিকাল ৫টা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক (একাডেমিক ভবন ২ থেকে ৩) পূর্ণবেলা প্রশাসনিক কর্মবিরতি, আলোচনা, সেমিনার ও অবস্থান কর্মসূচি।