ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ , ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তানোরে আলু চাষে লোকসান পথে বসেছেন হাজারো প্রান্তিক কৃষক


আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-০৩ ০০:৩৬:২২
তানোরে আলু চাষে লোকসান পথে বসেছেন হাজারো প্রান্তিক কৃষক তানোরে আলু চাষে লোকসান পথে বসেছেন হাজারো প্রান্তিক কৃষক
 


দেলোয়ার হোসেন সোহেল : রাজশাহীর তানোরে আলু চাষে প্রতি বিঘায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা। স্বর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছেন হাজারো প্রান্তিক কৃষক। ফলে, ঋণের দায়ে দিশেহারা হয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেক প্রান্তিক আলু চাষি কৃষকরা। আলু চাষী কৃষকরা বলছেন, গত কয়েক বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এবছর আলু চাষে ঝুকে পড়েন প্রান্তিক কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশায় কর্মরত চাকুরী জীবিরাও। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িযে যায় আলু চাষ।


এসব চাকুরী জীবিরা তানোরসহ আশ পাশের বিভিন্ন উপজেলায় গিয়েও প্রজেন্ট হিসেবে আলু চাষ  করেন। আলু রোপনের শুরুতেই উচ্চ মুল্ল্যে জমি লীজ, বীজ ও সারসহ কীটনাশক কিন্তে হয়েছিলো চাষীদের। এবছর অন্য বছরের চেয়ে আলু চাষে খরচ বেড়ে দাড়ায় প্রতি বিঘায় ৯০ হাজার টাকা থেকে ৯৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। অপর দিকে গত বছরের চেয়ে স্টোরের ভাড়াও বেড়েছে এবার। গত বছর ভাড়া ছিলো প্রতি কেজি প্রায় ৪ টাকা এবছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭/৮ টাকায়।


গত কয়েকদিন থেকে আলু বিক্রি স্টোর ভাড়া ও লেবার খবর বাদ দিয়ে কৃষকরা প্রতি বিঘায় ক্যাশ ফেরৎ পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। কেউ কেউ একটু বেশী পেলেও কৃষকরা প্রতি বিঘায় লোকসান গুনছেন ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে স্টোরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতা সংকটসহ লোকসানের মুখে পড়ায় স্টোর গুলোতে ভীড় নেই বিক্রেতাদের। অতি প্রয়োজন ছাড়া আলু বিক্রি করছেন না চাষীরা।


তানোর পৌর এলাকার কালনা গ্রামের যুবক মাহাবুর রহমান বলেন, এবছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু চাষে প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ৩ বিঘা জমির ১শ' ৫০ বস্তা আলু রহমান কোল্ড স্টোর ইউনিট -২ এ রেখেছিলেন। রোববার তিনি ১শ' ৩৫ বস্তা আলু করে বিক্রি করেছেন সাড়ে ১৫ টাকা কেজি দরে। স্টোর খরচ ও লেবার খরচ বাদ দিয়ে ক্যাশ পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫শ' ৩০ টাকা। ৩ বিঘা জমিতে তার লোকসান হয়েছে ২লাখ ৩০ হাজার ৪শ' ৭০ টাকা।


তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় মহল্লার আলু চাষী হাফিজ উদ্দিন বলেন, এবছর দিনাজপুরে ১শ' ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। ৬৫ কেজির বস্তায় ফলন হয়েছে ৪২ বস্তা। তিনি বলেন, ৮ বিঘা জমির ৩শ' ৩৩ বস্তা আলু বিক্রি করে স্টোর খরচ ও লেবার খবর বাদ দিয়ে ক্যাশ পেয়েছি ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ৮ বিঘা জমির আলু বিক্রি করে লোকসান হয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তিনি আরো বরেন, কৃষকরা প্রতি বিঘা জমির আলু বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা ক্যাশ ফেরৎ পাবেন। যাদের খরচ বেশী, ফলনও বেশী তাদেরও একই অবস্থা বলেও জানান তিনি।


গত বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিলো প্রতি কেজি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে, সর্বশেষে মুহুর্তে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কেজি দামেও বিক্রি করেছিলেন অনেক আলু চাষী কৃষকরা। এবছর আলু উত্তলনের সময় প্রতি কেজি আলু দাম ছিলো ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। আলু চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ফলনও খানিকটা ভালো হয়েছে। স্টোরের সংখ্যা বাড়ায় অন্য এলাকার চাষীরাও তানোরের স্টোর গুলোতে আলু  সংরক্ষণ করেছেন।


এবছর উত্তলন করা আলু স্টোর যাত করতে অনেক প্রান্তিক কৃষককে দালালদেরকে অনৈতিক সুবিধা অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। অপর দিকে স্টোরে আলু সংরক্ষণের জায়গা না পাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করতে পারেননি অনেক কৃষক। বাড়ির সামনে ও জমিতে দীর্ঘদিন ফেলা রাখায় নষ্ট হয়েছে কৃষকদের এক তৃতীয়ংশ আলু। ফলে, এবছর আলু চাষী ও কৃষকরা লোকসান গুনছেন প্রতিবিঘায় ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

তবে, লোকসানের ক্ষেত্রে কম বেশীও হচ্ছে। এবছর আলু চাষে লোকসানের মুখে পড়ায় স্বর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার আশংকায় এবং ঋণের দায়ে দিশেহারা হয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেক প্রান্তিক আলু চাষি কৃষকরা।

 

তবে, আলু চাষীর কেউ কেউ বলছেন, যদি দেশে বড় বন্যা বা বিদেশে রপ্তানী করা যায় তাহলে আলুর দাম বাড়তে পারে। আবার কেউ কেউ এসব সম্ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে বলছেন আলুর দাম এবছর আর বাড়বে না। বাড়লেও এবছর লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের বলেও জানান এলাকার একাধিক আলু চাষী কৃষকরা।


তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, চলতি বছর তানোর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌর এলাকায় ১৩ হাজার ৩শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবছর অধীক বেশী জমিতে আলু চাষ হয়েছে এবং ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবে, দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন আলু চাষী কৃষকরা। তবে, আলুর জমিতে রোপনকৃত টিআমন ধানের ফলন ও দাম বেশি পাওয়ার কৃষকদের আলু চাষের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ